স্বাতী চ্যাটার্জি- এ কাহিনি বহু পুরনো, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ইজিপ্টে এক রাজা ছিলেন। নাম হুনি। রাজা প্রায়ই রাতে নগর দর্শনে বেরোতেন, তাঁর এক প্রিয় অমাত্যকে নিয়ে। গ্রাম্য পাহারাদার সেজে।

প্রায়ই কোনও না কোনও গৃহস্থের বাড়ির সামনে বিশ্রাম নিতেন। আসল উদ্দেশ্য ছিল, নাগরিকদের কথা শোনা। প্রায় তিন মাস এমন ভ্রমণের পর, তিনি উপলব্ধী করলেন, নাগরিদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব দেখা দিচ্ছে। গৃহস্থের মধ্যে কোলাহল তৈরি হচ্ছে।
তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর প্রজাদের মধ্যে নৈতিকতা, আদর্শ কতটা তলানির দিকে যাচ্ছে, তার পরীক্ষা নেওয়া যাক।
একদিন তিনি তাঁর প্রিয় অমাত্যকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার মধ্যে একটি বড় পাথর রেখে দিলেন। তারপর পাশে থাকা একটি ঝোপে দুজনে লুকিয়ে দেখতে থাকলেন। বহু পথচারী আসে যায়, কিন্তু পাথরটিকে সরানোর কেউ চেষ্টা পর্যন্ত করেন না।
অধিকাংশ পথচারী রাজাকে দোষ দিতে থাকেন। বলেন, রাজা যেমন অকর্মণ্য, তেমন তার কর্মচারীরা। কেউ কাজ করে না। শুধু বসে বসে মাইনে নেয়। কোনও দায় দায়িত্ব নেই।
এই ভাবে বেশ কয়েকদিন চলল, রাজা ও অমাত্য ছদ্মবেশে, ঝোপের আড়াল থেকে নজর রাখছিলেন। রাজা বুঝতে পারলেন, তাঁদের প্রজাদের মধ্যে অদ্ভুত হতাশা ও ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে রাজার বিরুদ্ধে, কিন্তু পাথরটিকে সরানোর প্রয়াস মাত্র করছেন।

একদিন এক সব্জি বিক্রেতা রাস্তা দিয়ে চলার পথে পাথরটিকে দেখতে পান। তিনি চারপাশ দেখেন, আশে পাশে কেউই নেই, যে যাঁকে সঙ্গে নিয়ে পাথরটিকে সরাবেন। তিনি মাথার ঝুড়ি পাশে রেখে, পাথরটিকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলেন, প্রায় মিনিট পনেরো পর, সর্বশক্তি দিয়ে পাথারটিকে রাস্তার একপাশে নিয়ে গেলেন।
পাথর সরানোর পরেই তিনি দেখতে পান, পাথরের তলায় চাপা ছিল একটি লাল কাপড়, সেটিকে খুলতেই বেরিয়ে এলো একটি রাজ নির্দেশ। সেখানে লেখা ছিল, রাস্তার পাশেই ঝোপের মধ্যে একটি পুরনো হলুদ কাপড় দেখতে পাবে, সেখানেই রাখা আছে তোমার পারিশ্রমিক।

সব্জি বিক্রেতা, চারপাশে বেশ কিছু ঝোপ দেখতে পেল, তার মধ্যে একটি ঝোপে দেখল, হলুদ কাপড় ঝুলছে। সেখানে গিয়ে, একটি ছোট কলসি দেখতে পায়, তা খুলতেই তার নজরে আসে শত শাহী মুদ্রা। সেখানে আরও একটি নির্দেশ দেওয়া ছিল, রাজ দরবারে দেখা করার।
পরেরদিন, ওই সব্জি বিক্রেতা রাজদরবারে দেখা করেন। তাঁকে রাজা আরও পুরস্কৃত করেন। সঙ্গে রাজ্যের নীতি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন।

নীতিকথা- আমরা নীতি, আদর্শের সঙ্গে নাগরিক কর্তব্যকেও বিসর্জন দিলে, মানব সভ্যতা আদপে পশুখামারে পরিণত হয়। পুরস্কারের আশায় নয়, কার কী দায়িত্ব সেটা না ভেবে, আসুন, আমরাও কিছুটা নাগরিক কর্তব্যের দায়িত্ব তুলে নিই