অর্বিট ভ্রমণ- রাঁচি শহরকে কেন্দ্র করে দেখে নেওয়া যায় আশেপাশের কিছু সুন্দর প্রপাত। মূলত কাঞ্চি ও সুবর্ণরেখার এই প্রপাত এর খ্যাতি রয়েছে বহু বছর আগে থেকেই শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরের দশম এর উচ্চতা ১৪৪ ফুট। ৪৩ কিলোমিটার দূরের হুড্রু এর উচ্চতা ৩২০ ফুট। ৩৮ কিলোমিটার দূরের গৌতম ধারা এর উচ্চতা ১৪০ ফুট, ক্ষুদ্র পথে সীতা ও দশম পেরিয়ে প্রপাত গুলির মধ্যে অন্যতম। প্রপাত গুলি ছাড়া আর রাঁচি শহর ও উপকণ্ঠেও রয়েছে বেশ কিছু পর্যটক প্রিয় জায়গা জ্যোতিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত টেগর হিল বা মোরাবাদি পাহাড় কাকে বাঁধের রক গার্ডেন নক্ষত্র বন পাহাড়ি মন্দির চিড়িয়াখানা বিরসা মুন্ডা জৈবিক উদ্যান হাতিয়া ড্যাম তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে রাঁচির গড় উচ্চতা ৬৫২মিটারের কাছাকাছি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের ও ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে চূড়ান্ত গরমের দিনই কয়টি ছাড়া রাঁচির আবহাওয়া আরামপ্রদ তবে শীতকালে এখানে খুবই ঠান্ডা পড়ে।
দেখে নিতে পারেন হাজারীবাগ
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬১৬ মিটার উঁচুতে হাজারীবাগ রাঁচি থেকে অথবা সরাসরি ট্রেনে ও সড়কপথে পৌঁছানো যায় এখানে। অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরামদায়ক জলবায়ু, নির্জনতা এবং মন্থর জীবনযাত্রা এখানকার সম্পদ এখানের মূল আকর্ষণ শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের জাতীয় উদ্যানটি শাল, শিশু, পলাশ, মহুয়া এবং আরো নানান বৃক্ষ তরুলতার সম্মেলন এই জঙ্গলে। শম্বর, চিতল, ভাল্লুক, বনবেড়াল, শেয়াল নানা তৃণভোজী প্রাণী ও অজগরসহ নানা সাপ ও মাংসাশী প্রাণীর অবাধ বিচরণক্ষেত্র।
এই জাতীয় উদ্যান নানান ধরনের পাখি যেমন ময়ূর, বাজ, বেনে বউ, মাছরাঙ্গা, ময়না দেখা যাবে। এখানে অরণ্যের মধ্যে আছে দর্শক অবজারভেশন টাওয়ার। নেচার ইন্টারপ্রেটেশন সেন্টার, তৃণভোজী প্রাণী পুনর্বাসন কেন্দ্র। জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার গেলে, রয়েছে রাজা দেওরা টুরিস্ট লজ। নদীকে বাদ দিয়ে ঘিরে তৈরি হয়েছে সুন্দর জলাশয় ওপারে অরণ্য আদি। কাছাকাছি রয়েছে খান দুয়েক ওয়াচ টাওয়ার তার ওপর থেকে অরণ্যের বেশ কিছু অঞ্চলের একটা বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়। বন্যপ্রাণী দেখা ভাগ্যের ব্যাপার হলেও এখানকার আদিম অরণ্যভূমি প্রকৃতি প্রেমিকদের ভালো লাগবে।
হাজারীবাগ শহরের মধ্যে আছে, হাজারীবাগ লেক। তার শান্ত সুন্দর তরুপল্লব শোভিত পাড় ধরে সকাল সন্ধ্যায় পায়চারি ভ্রমণ ভালই লাগবে। রয়েছে বোটিং এর ব্যবস্থা উল্টোদিকেই স্বর্ণ জয়ন্তী উদ্যান পার্কের নানা মজা টয়ট্রেন ফোয়ারা বিবিধ গাছপালা মজাদার পশু পাখির মূর্তি কাফেট এরিয়া সব নিয়ে একটি পারিবারিক বিনোদন উদ্যান এটি। এর ভেতরে চড়ুইভাতির ব্যবস্থা আছে।
শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কানহেরি হিল নামে একটি ছোট পাহাড় বিকেলের দিকে এই দিকটি খুবই সুন্দর হয়ে ওঠে। এই পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সিঁড়ি আর পাথরে পথ আছে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি পুরনো অবজারভেশন টাওয়ার। সেখান থেকে সমস্ত জনপদ ও আশপাশের অরণ্যভূমির দৃশ্য সুন্দর সূর্যাস্ত ও বেশ মনোরম এখানে হাতে সময় এবং ইচ্ছা থাকলে হাজারীবাগকে কেন্দ্র করে কোনার ও তিলাইয়া ড্যাম দেখে নেওয়া যেতে পারে রাঁচি হাজারীবাগ রোডের মাঝামাঝি রামগড় থেকে বত্রিশ কিলোমিটার দূরে রাজারা জলপ্রপাত ও ছিন্নমস্তার মন্দির সুপরিচিত অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সতী পিঠের অন্যতম এটি, দেবী এখানে ছিন্নমস্তা ভৈরবী নদী ও দামোদরের সঙ্গমে টিলার উপর এই মন্দির দেবীর রূপ এখানে ভয়ংকর দশমহাবিদ্যার অন্যতম ছিন্নমস্তা কালী খুব জাগ্রতা বলে বিশ্বাস।

হাতে সময় পেলে দেখে নিন বেতলা
পালামৌর জঙ্গলের প্রায় আড়াইশো বর্গ কিলোমিটার এর কাছাকাছি কোর এলাকা বেতলা ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে জনপ্রিয়। প্রায় ৩৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গা পর্যটকদের কাছে উন্মুক্ত। রাঁচি থেকে রাতু লাতেহার হয়ে ডালটনগঞ্জের প্রায় ১০ কিলোমিটার আগে বামহাতি পথে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বেতলা। বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোটেল ও বনদপ্তরের অফিস রয়েছে পলাশ, মহুয়া, শাল গাছের এই অরণ্যে বাঘ, হাতি, চিঙ্কারা, শম্বর, চিতল, লেঙ্গুর, হনুমান আর নানান পাখির স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র। সকালে হাতির পিঠে এবং বিকেলে গাড়ি করে জঙ্গল ভ্রমণ করা যায়। এখান থেকে উত্তর পূর্বে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে রয়েছে চেরো রাজার দুর্গ।
বেশ ঘন জঙ্গলে অবস্থিত। ভগ্ন স্থাপত্য সমৃদ্ধ এই দুর্গম অঞ্চল দুর্গে মুঘল স্থাপত্য রীতির ছাপ স্পষ্ট। দুর্গের অন্যতম মূল অংশ আজ জঙ্গলের গ্রাসে । পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত অংশের প্রাকারে উঠলে কেল্লার বিশালতা সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, তার কাছে সল্টলেক পয়েন্ট আর টাইগার ক্রসিং জোনে হাতির দেখা পাওয়া। বাঘের দর্শন বেশ ভাগ্যের ব্যাপার তবে হাতে সময় নিয়ে গেলে হরিণ, বাইসন, ময়ূর নানা পাখি এবং হাতি দেখা যেতে পারে। বাঘ ও হাতি দেখার জন্য সল্টলেক পয়েন্ট বা টাইগার ক্রসিং জোনে অপেক্ষা করা সুবিধাজনক। উৎসাহীরা এখান থেকে নয় কিলোমিটার দূরে ডালটনগঞ্জের পথে কোয়েল আর ঔরঙ্গা নদীর সঙ্গমে কেচকির আদিম ও সুন্দর অরণ্য দেখে নিতে পারেন।
সার্কিট ট্যুরে রাখতে পারেন নেতারহাট
ছোটনাগপুর পর্বতের রানী নেতারহাট ১ হাজার ২৫০ মিটার উঁচু। শাল, পলাশ, আর পাইন ঘেরা ছোট্ট সুন্দর শৈলাবাস নেতারহাট এর খ্যাতি মূলত সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্যের জন্য হোটেল এবং অন্যান্য ধরনের থাকা খাওয়ার জায়গার কিছুটা অভাব আছে। তবুও নেতারহাটের আকর্ষণ সুখ প্রাচীন শুধুই প্রকৃতির মাঝে পদব্রজে হারিয়ে যাওয়া। আর সূর্যাস্ত সূর্যোদয়ের রূপে বিভোর হওয়ার জন্য নেতারহাট আদর্শ ঝাড়খন্ড পর্যটনের হোটেল প্রভাত বিহারের সংলগ্ন অঞ্চল থেকে সূর্যোদয় এবং সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ম্যাগনেলিয়া পয়েন্টের সূর্যাস্ত মনে রাখার মত।
পায়ে পায়ে অথবা নিজস্ব গাড়িতে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় নেতারহাট লেক, কোয়েল ভিউ পয়েন্ট, আপার ঘাগরি ও লোয়ার ঘাগড়ি জলপ্রপাত। সময় থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় হনুমানের জন্মস্থান অঞ্জন গ্রাম। নেতারহাট থেকে ৬১ কিলোমিটার দূরে দুর্ভেদ্য জঙ্গলের মধ্যে ৪৬৮ ফুট জলপ্রপাত ভ্রমণ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে রাঁচি-হাতিয়া বা জনশতাব্দী ধরে রাঁচি। সেখান থেকে পুরো সার্কিট ট্যুর করতে নিজেদের গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া জামশেদপুর থেকে বাসে তিন ঘণ্টার পথ রাঁচি।
থাকবেন কোথায়?