পরিচিতি
হাওড়া জেলার আন্দুলে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দির আজ শুধুমাত্র জেলার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র বাংলায় এই মন্দিরের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এক বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা চারচালা মন্দিরটির সামনে দিয়ে সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে। মাঝখান দিয়ে কেটে যাওয়া রাস্তার পাশেই রয়েছে নাটমন্দির, যদিও এটি মন্দিরের সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
মন্দিরের প্রবেশপথের ডান দিকে একটি পাথরের ফলকে উৎকীর্ণ রয়েছে—
“শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী শঙ্করী মাতার মন্দির স্থাপিত সন—১১৭৮ শকাব্দ (১৬৯৩ খ্রিস্টাব্দ), আন্দুল সিদ্ধেশ্বরীতলা, হাওড়া। প্রতিষ্ঠাতা—সাধকপ্রবর ভৈরবীচরণ বিদ্যাসাগর। তাঁহার জ্ঞানদ্যুতিতে উদ্ভাসিত আন্দুল গ্রাম ‘দক্ষিণ নবদ্বীপ’ আখ্যায় আখ্যায়িত হয়।”
এই ঐতিহাসিক গুরুত্বকে সঙ্গে নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসতে হয় উঁচু ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠিত লাল মন্দিরের দাওয়ায়।
দেবীমূর্তি ও মন্দিরের স্থাপত্য
মন্দিরের গর্ভগৃহ অত্যন্ত অনাড়ম্বর, তবে দেবীর বিগ্রহ অপূর্ব সৌন্দর্যময়। পাথরের বেদীর ওপরে কাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠিতা মা সিদ্ধেশ্বরী, যাঁর মূর্তি এক অতুলনীয় শোভা বিকিরণ করে।
দেবীর মাথায় কারুকাজ করা রুপোর জলঢালা সোনার মুকুট। গলাভর্তি অলঙ্কার, নাকে নথ, হাতে সোনার বালা ও শাখা। দেবীমূর্তিটি কষ্টিপাথরের তৈরি এবং তিনটি নয়নই সোনার, যা জ্যোতির্ময় দীপ্তিতে ঝলমল করে। দেবীর উচ্চতা আনুমানিক আড়াই থেকে তিন ফুটের মতো। বিগ্রহের বাঁ পাশে শায়িত অবস্থায় মহাদেবের মাথা দেখা যায়। দেবীর মূর্তি এতটাই মায়াময় যে দর্শনার্থীদের মন সহজেই আকৃষ্ট হয়।
পূজা ও ধর্মীয় আচার
প্রতিদিন মন্দিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়, তবে শনিবার ও মঙ্গলবার এই ভিড় সর্বাধিক থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, মা সিদ্ধেশ্বরী অত্যন্ত জাগ্রত দেবী। ভক্তের প্রার্থনা নিষ্ফল হয় না, এমন ধারণা বহু প্রজন্ম ধরে প্রচলিত।
প্রায় আড়াই শতাব্দী ধরে, ১৭৭১ সাল থেকে, এই মন্দিরে নিয়মিত নিত্যপূজা হয়ে আসছে। প্রতিদিন দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। কার্তিক মাসে কালীপূজা মহাআড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা থেকে তিন দিন ধরে মন্দিরে বিশেষ হোমযজ্ঞ ও গ্রামের কল্যাণার্থে শান্তিস্বস্ত্যয়ন করা হয়। এখানে ছাগবলির প্রথাও প্রচলিত।
মন্দির খোলার সময়সূচি
- সকাল: ৫:০০ – ১:০০
- বিকেল: ৫:০০ – রাত ৯:৩০
কিভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ ধরে আন্দুল স্টেশনে নেমে রিকশায় মাত্র ২০ মিনিটেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। এছাড়া, আন্দুল বাসস্ট্যান্ড থেকে স্বপ্না সিনেমার পাশ দিয়ে মাত্র ৫-৭ মিনিট হাঁটলেই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
এই প্রাচীন ও জাগ্রত মন্দিরটি শুধু হাওড়ার নয়, সমগ্র বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয়।
