Breaking News

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, এটি ভারতীয় সভ্যতার আস্থার প্রতীক। শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস ও কিংবদন্তির সঙ্গে জড়িত এই মন্দিরের নির্মাণ এক দীর্ঘ সংগ্রামের সাক্ষী।

রাম মন্দিরের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

অযোধ্যার রাম মন্দিরের ইতিহাস প্রাচীনকালে প্রসারিত।

  • প্রাচীন ঐতিহাসিক তথ্য:
    হিন্দু গ্রন্থ অনুযায়ী, এটি ভগবান শ্রীরামের জন্মস্থান। ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণিত আছে যে, রামচন্দ্র এখানে রাজারাজেশ্বর দশরথের রাজপ্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
  • মধ্যযুগ:
    ১৫২৮ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের সময়ে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যা পরে বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত হয়। এর ফলে বহু শতাব্দী ধরে এটি একটি বিতর্কিত স্থান হয়ে ওঠে।
  • আধুনিক যুগ:
    ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর মন্দির পুনর্নির্মাণের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়, এবং ২০২0 সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

পৌরাণিক কিংবদন্তি

রামায়ণের বর্ণনা অনুসারে:

  • ভগবান রামের জন্ম:
    রামায়ণের কাহিনি অনুসারে, রাজারাজেশ্বর দশরথের তিন রানি – কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন। তাদের মধ্যে শ্রীরাম ছিলেন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার।
  • রামের রাজত্ব:
    অযোধ্যার সিংহাসনে বসার পূর্বেই তিনি বনবাসে যান এবং লঙ্কার রাজা রাবণকে পরাজিত করে সীতা দেবীকে উদ্ধার করেন। এরপর তিনি অযোধ্যায় ফিরে “রামরাজ্য” স্থাপন করেন, যা সুশাসন ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক।
  • শ্রীরাম মন্দিরের মাহাত্ম্য:
    বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত আছে, শ্রীরামচন্দ্রের পুত্র লব ও কুশ এই স্থানে প্রাচীন রাম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। পরে এটি বহুবার পুনর্নির্মাণ করা হয়।

আধুনিক রাম মন্দির নির্মাণ ও স্থাপত্য

নতুন রাম মন্দিরের নকশা ও নির্মাণ ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

  • স্থাপত্য শৈলী:
    মন্দিরটি নাগরা শৈলীতে নির্মিত হচ্ছে, যা উত্তর ভারতের মন্দির স্থাপত্যের অন্যতম প্রাচীন রূপ।
  • প্রধান বৈশিষ্ট্য:
    • মন্দিরটি ১৬১ ফুট উঁচু ও তিন তলা বিশিষ্ট
    • এখানে ৫ টি গম্বুজ এবং ৩৬০ টি স্তম্ভ থাকবে, প্রতিটি স্তম্ভে রামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা খোদাই করা হবে।
    • মূল মন্দিরে শ্রী রামের শিশু মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
  • উদ্বোধন ও গুরুত্ব:
    ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি রাম মন্দিরের প্রধান অংশের উদ্বোধন করা হয়, যা কোটি কোটি ভক্তদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

উপসংহার

অযোধ্যার রাম মন্দির কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ভারতীয় ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং সভ্যতার পুনর্জাগরণের প্রতীক। বহু শতাব্দীর লড়াইয়ের পর, শ্রীরামের ভক্তরা অবশেষে তাঁর জন্মভূমিতে এক মহান মন্দিরের পুনর্নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

উত্তরাখণ্ডের পঞ্চ কেদার: মহাদেবের পাঁচ রহস্যময় তীর্থস্থানের গল্প

উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা কেদারনাথ, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ, মধ্যমাহেশ্বর এবং কল্পেশ্বর – এই পাঁচটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!