Breaking News

অট্টহাস সতী পীঠ: ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি ও লোকবিশ্বাসের দলিল

প্রাচীনত্ব ও পৌরাণিক আখ্যান

অট্টহাস সতী পীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান, যা ৫১টি সতী পীঠের মধ্যে অন্যতম। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্য রোধ করতে ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। অট্টহাসে দেবীর অধর বা নিচের চোয়াল পতিত হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে।

নামকরণের উৎস

“অট্টহাস” শব্দের অর্থ প্রবল হাসি। কল্পনা করা হয় যে, এখানে দেবী সতী একসময় অট্টহাস্যে মগ্ন ছিলেন। তাই এই স্থানের নাম হয় ‘অট্টহাস’।

মন্দিরের স্থাপত্য ও বিশেষত্ব

অট্টহাস মন্দির একটি প্রাচীন স্থাপনা হলেও বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে। এখানে দেবী “ফুলরা” নামে পূজিতা হন এবং ভৈরব রূপে পূজিত হন “বিশ্বেশ্বর”। মন্দির চত্বরে একটি বিশালাকৃতির শিবলিঙ্গও রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

প্রতি বছর এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন বিশেষত কালীপুজো, অমাবস্যা ও অন্যান্য তিথিতে। স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাস, এখানে মানত করলে দেবী মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।

লোকবিশ্বাস ও কিংবদন্তি

অনেকের মতে, মন্দিরের আশেপাশে দেবী সতীর শক্তির উপস্থিতি অনুভূত হয়, এবং রাতে নাকি দেবীর হাসির শব্দও শোনা যায়। যদিও এটি কেবল লোককথা, তবে এমন বিশ্বাস মন্দিরের ঐতিহ্যকে আরও মজবুত করেছে।

অট্টহাস সতী পীঠ শুধুমাত্র একটি তীর্থস্থান নয়, এটি ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনি ও লোকসংস্কৃতির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।

অট্টহাস সতী পীঠ ভ্রমণ: ইতিহাসের ছোঁয়ায় এক তীর্থযাত্রা

কলকাতা থেকে অট্টহাস সতী পীঠ মন্দির যাত্রা

অট্টহাস সতী পীঠ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুর থানার অন্তর্গত স্থানে অবস্থিত। কলকাতা থেকে এখানে যাওয়ার জন্য কয়েকটি উপায় রয়েছে—

রেলপথে:

  • কলকাতা থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতন বা লাভপুরের কাছাকাছি কোনও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে হবে।
  • হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে বোলপুর (শান্তিনিকেতন) পর্যন্ত ট্রেন পাওয়া যায়।
  • বোলপুর থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে লাভপুর হয়ে অট্টহাস মন্দিরে পৌঁছানো যায় (প্রায় ৩০-৩৫ কিমি)।

সড়কপথে:

  • কলকাতা থেকে NH19 (আগের NH2) ধরে পানাগড় পর্যন্ত আসতে হবে।
  • তারপর পানাগড়-বোলপুর-লাভপুর হয়ে প্রায় ১৮০-২০০ কিমি পথ অতিক্রম করে মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
  • প্রাইভেট গাড়ি, বাস বা ভাড়ার গাড়িতে সহজেই যাতায়াত করা যায়।

অট্টহাসের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

অট্টহাস মন্দির দর্শনের পর কাছাকাছি আরও কিছু সুন্দর স্থান ঘুরে দেখা যেতে পারে—

১. জয়দেব-কেন্দুলী (প্রায় ৩০ কিমি দূরে)

বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি জয়দেবের জন্মস্থান। এখানকার কেন্দুলী মেলা ও রাঢ় বাংলার বাউল গান বিশেষ আকর্ষণীয়।

২. শান্তিনিকেতন (প্রায় ৪৫ কিমি দূরে)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, আম্রকুঞ্জ, উপাসনা গৃহ ও সোনাঝুরি হাট এখানকার প্রধান আকর্ষণ।

৩. বক্রেশ্বর (প্রায় ৬০ কিমি দূরে)

এটি একটি উষ্ণ প্রস্রবণ ও তীর্থস্থান, যেখানে শিবমন্দির ও গরম পানির কুণ্ড দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

৪. লাভপুরের চন্দ্রনাথ শিব মন্দির

এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির যা ইতিহাস ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা

লাভপুর বা বোলপুরে থাকার জন্য হোটেল ও লজ পাওয়া যায়। শান্তিনিকেতনে বেশি সংখ্যক রিসোর্ট ও হোমস্টে আছে। স্থানীয় ধাবা বা হোটেলে বাঙালি খাবার, বিশেষত শুক্তো, মাছের ঝোল, লুচি-আলুর দম ও মিষ্টি পাওয়া যায়।

উপসংহার

অট্টহাস সতী পীঠ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও লোককথার মেলবন্ধন। কলকাতা থেকে একদিনের বা উইকেন্ড ট্রিপের জন্য এটি দারুণ এক গন্তব্য, যা ভক্তি ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের সমন্বয় ঘটায়।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির: এক জাগ্রত দেবী মন্দির, আসল রহস্য কী!

মন্দিরের পরিচিতি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হল সর্বমঙ্গলা মন্দির। এটি কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!