অর্বিট নিউজ- কোভিডের পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নয়, তারই মাঝে জায়গা করে নিচ্ছে আরও এক মারণ রোগ, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।
ধরা যাক, কারও কোভিড হয়েছিল, তিনি সেরেও উঠেছেন। কিন্তু যাঁর শরীরে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেখা দিচ্ছে, তাদের ৫০ শতাংশ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে চলে যাচ্ছেন। আর এই রোগের নাম মিউকরমাইকোসিস।
অতি সম্প্রতি ই ভয়াবহ চিত্রের কথা উঠে এসেছে খাস ভারতে। দিল্লি এমনকী গুজরাটেও বেশ কিছু রোগীর শরীরে এমন মারণ ফাঙ্গাস ধরা পড়েছে। ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরেই, নতুন এক মারণ রোগের আমদানি দেখা দিচ্ছে। আর তা দেখা দিচ্ছে কোভিড থেকে যাঁরা সেরে উঠছেন তাঁদের মধ্যে। অতি সম্প্রতি দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে একাধিক এই মারণ ফাঙ্গাল ইনফেকশনের বিষয়টি নজরে এসেছে।
গবেষকদের দাবি, গত বছরও এমন কিছু ঘটনা নজরে আসে। সেই সময় থেকে মনে করা হয়, এই প্রাণঘাতী ফাঙ্গাল ইনফেশনের জনক আসলে করোনা ভাইরাস। আর এই ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জেরে অনেকের দৃষ্টিক্ষমতাও কমে আসছে। গত দু দিনে ৬ জন রোগী দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।দিল্লির পাশাপাশি গুজরাটেও এই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সাধারণের তুলনায় একটু দ্রুত গতিতেই মারণ ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। জানা গিয়েছে, যাঁরা কোভিড আক্রান্তের সময়, আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন, আবার সেরে উঠেছেন, তাঁরাও ব্ল্যাক ফাঙ্গালে আক্রান্ত হচ্ছেন, পাশাপাশি তাদের আবার আইসিইউতে ভর্তি করাতে হচ্ছে।
তবে যাঁদের ডায়বেটিক রয়েছে, এমন বেশি পরিমাণে স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা বেশি দানা বাঁধছে।
এখন দেখা যাক এই ফাঙ্গাল ইনফেকশন কি!
আমাদের শরীরে কোনও ফরেন বডি যখন বাসা করে। এবং নিজের অনুকূল পরিবেশে বংশ বিস্তার করে, তখন তাকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গিও হতে পারে। সাধারণত, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ততটা ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু কিছু আছে, যা প্রাণঘাতী বলা যায়। যেমন আমাদের ফুসফুসে , ফ্লু, টিবির মতো ভাইরাস বাসা জমালে তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
এখানে যে ভাইরাসের নাম বলা হচ্ছে তা হল, মিউকরমাইকোসিস। আগে বলা হত, জাইগোরমাইকোসিস। এটি ঠিক কেমন !
এটি অনেকটাই মোল্ডের মতো। অর্থাত, কয়েকদিনের বাসি পাউরুটিতে যেমন ফাঙ্গাস পড়ে, অনেকটা সেই রকম। এইরকম একগুচ্ছ মোল্ডকে বলা হয়, মিউকার মাইসাইটস। এর ফলেই এই মিউকরমাইকোসিস ফাঙ্গাল রোগের দেখা মেলে।
গবেষকদের দাবি, এই ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়েছে, তা আগাম ধরা পড়লে, চিকিতসা সম্ভব। কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলে, প্রাণহানি নিশ্চিত। এটি প্রথমে নাকে হামলা চালায়, পরে সরাসরি চোখে আক্রামণ করে। তারপর ধীরে ধীরে ব্রেনে বাসা করতে শুরু করে।
কোভিড আসার আগেও, এই সমস্যা আগেও ছিল। কিন্তু কোভিড আসার পর এটি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে কেন!
গবেষকদের মত, কোভিডের সময়, রোগীকে যে ধরণের ওষুধ দেওয়া হয়, তার মধ্যে বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে, স্টেরয়েড। এর ফলে, অনেকেরই শরীরে ইমিউন সিস্টেম তলানিতে চলে যাচ্ছে। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ই ব্ল্যাক ফাঙ্গাল আক্রামণ করছে অনেককে। আর প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব না দিলে, অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে।
যদিও মিউকরমাইকোসিস কন্টেজিয়াস নয়। অর্থাত ছোঁয়াচে নয়।
এই ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হচ্ছে, তা বোঝার উপায় কি!
মুখমণ্ডলে যেধারে হবে, সেদিক ফুলে যাবে। মাথাধরা বা ব্যাথা থাকবে। নাকবন্ধ হয়ে যেতে পারে। জ্বর থাকতে পারে।
আর ফুসফুসে আক্রামণ চালালে, শ্বাসকষ্ট, শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে অস্বস্তি, বুকে ব্যাথা, সর্দি, জ্বর থাকতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরে প্রথমবার একটি মেডিসিনে ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। ওষুধটি প্রস্তুত করছে, ভারত সেরামস অ্যান্ড ভ্যাক্সিন লিমিটেড। এই কোম্পানিটি মুম্বইয়ের। ওষুধের নাম LAmB.
ওষুধ প্রস্তুত সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, এই মেডিসিনের ফলে, যে সমস্ত রোগীদের সার্জারি করতে হত, তাদের ক্ষেত্রে আর সার্জারির প্রয়োজন পড়বে না। ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ক্ষেত্রে এই ওষুধ উপকারী হতে পারে।