চিত্রকূট, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং পবিত্র স্থান, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। এটি প্রধানত রামায়ণের সঙ্গে যুক্ত এবং বহু পর্যটক ও তীর্থযাত্রী এখানে ভ্রমণে আসেন।
চিত্রকূটের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি
রামঘাট: রামঘাট হল মন্দাকিনী নদীর তীরে অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান। এটি এমন এক স্থান যেখানে ভগবান রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ তাদের ১৪ বছরের বনবাসের সময় অবস্থান করেছিলেন। প্রতিদিন এখানে আরতির আয়োজন হয়, যা এক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
কামদগিরি পর্বত: এই পবিত্র পর্বতটিকে ভগবান রামের প্রতীক বলে মনে করা হয়। তীর্থযাত্রীরা এখানে পদযাত্রা করেন এবং পর্বতের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে প্রার্থনা করেন।
হনুমান ধারা: এটি একটি প্রাকৃতিক ঝরনা যা হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। কিংবদন্তি অনুযায়ী, ভগবান রাম এটি স্থাপন করেছিলেন হনুমানের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।
গুপ্ত গোদাবরী গুহা: দুটি পবিত্র গুহা, যেখানে একটি সরু জলধারা প্রবাহিত হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে রাম ও লক্ষ্মণ এখানে প্রার্থনা করতেন।
সীতার রান্নাঘর: এটি একটি ছোট গুহা যেখানে সীতাদেবী তাদের বনবাসের সময় রান্না করতেন বলে বলা হয়।
ভারত মন্দির: এটি এমন একটি স্থান যেখানে ভরত ভগবান রামের চরণপাদুকা (পায়ের চিহ্ন) নিয়ে রাজত্ব করেছিলেন। এই স্থানটি অত্যন্ত পবিত্র।
চিত্রকূটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
চিত্রকূটের উল্লেখ প্রাচীন গ্রন্থে, বিশেষত রামায়ণে পাওয়া যায়। এটি সেই স্থান যেখানে মহর্ষি অত্রি ও তার পত্নী অনসূয়া ভগবান রামকে আশীর্বাদ করেছিলেন। এখানেই ভরত রামচন্দ্রের দর্শন করতে এসেছিলেন এবং তাদের রাজ্য ফিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। এছাড়া, বহু সাধু-সন্ত এই স্থানে ধ্যান করতেন। চিত্রকূট প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র।
কলকাতা থেকে চিত্রকূট যাওয়ার উপায়
ট্রেনে:
কলকাতা থেকে চিত্রকূট যাওয়ার জন্য ট্রেন একটি সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক মাধ্যম।
সরাসরি ট্রেন: ‘কলকাতা’ থেকে ‘চিত্রকূট ধাম করবি’ স্টেশন পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন পাওয়া যায়।
ট্রেনের সময়সূচি এবং টিকিট বুকিংয়ের জন্য IRCTC-এর ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
ফ্লাইটে:
কলকাতা থেকে খাজুরাহো বিমানবন্দর বা এলাহাবাদ বিমানবন্দরে ফ্লাইট নেওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে চিত্রকূট সড়কপথে প্রায় ২-৩ ঘণ্টার দূরত্বে।
সড়কপথে:
কলকাতা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাসে চিত্রকূট যাওয়া সম্ভব, যদিও দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিমি।
জাতীয় সড়ক ধরে যাত্রা করলে সময় লাগবে প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা।
থাকার ব্যবস্থা
চিত্রকূটে বিভিন্ন ধর্মশালা, আশ্রম এবং হোটেল রয়েছে। পঞ্চায়েতি ধর্মশালা এবং মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের পরিচালিত হোটেলগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাশ্রয়ী।
পরামর্শ
সঠিক সময়: শীতকাল (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) চিত্রকূট ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
আরামদায়ক পোশাক এবং হাঁটার জন্য ভালো জুতো নিয়ে যান।
ধর্মীয় স্থান ভ্রমণের সময় স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।
