উইকেন্ডে ঘুরে আসুন নির্জন নিরালা পাহাড় ঘেরা অফবিট জায়গা ঢেঙ্কানল

স্বাতী চ্যাটার্জি– অফিস বা ব্যসার কাজ করতে করতে হাঁফিয়ে গিয়েছেন? আশে পাশে দু তিন দিনের জন্য ছুটিতে কোথাও বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন? কিন্তু ভেবে পাচ্ছেন না কোথায় যাবেন, তাইতো?

আচ্ছা এমন একটি জায়গার খোঁজ যদি মেলে, যেখানে থাকবে পাহাড়, অরণ্য এবং একটু ভিন্ন ধর্মী গ্রাম্য জীবন। সেই সঙ্গে বাড়তি পাওনা বলতে নির্জন, নিরালা একদম একান্ত পরিবেশ, তাহলে এই সফরসূচি হতে চলেছে আপনাদের জন্য একদম আইডিয়াল।

পুরীতো অনেকেই বেড়িয়েছেন, এবার চলা যাক, ওডিশার একটু অচেনা ঠিকানায়। ঢেঙ্কানল। জায়গাটি অনেকের কাছে পরিচিত, আবার অনেকের কাছে অপরিচিত। কিন্তু এই ঢেঙ্কানলেই রয়েছে বেশ কিছু অনিন্দ্যসুন্দর জায়গা।

চলতি বর্ষার মরসুমেও এক অপরূপ সাজে সেজে ওঠে ঢেঙ্কানল। অফবিটতো বটেই, কিন্তু বাঙালি পর্যটকদের কাছে এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কথা দিচ্ছি, এমন কিছু জায়গার খোঁজখবর দেবো, কোনও এক উইকেন্ডে বেরিয়ে পড়তেই পারেন। আর একা পরিবার নিয়ে অচেনা, অফবিট জায়গায় যেতে কোনও সঙ্কোচ থাকলে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করুন আমাদের সঙ্গে। কথা বলে, যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাবার পর সিদ্ধান্ত নিন।

ঢেঙ্কানল (Dhenkanal Odisha)

ওডিশার কেন্দ্রে অবস্থিত এক জেলা ঢেঙ্কানল। পাহাড় ও অরণ্য দিয়ে ঘেরা এই জেলার রূপ একদম স্বতন্ত্র। ৪৪৫২ স্ক্যায়ার কিলোমিটার জুড়ে এই জেলা। জনসংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ।

এই জেলায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, সেগুলি হল, কপিলাস, সপ্তশয্যা, জোরান্ডা, দান্দাধার, নাগানাথেশ্বর মন্দির, সারাঙ্গা, কুয়ালো। এ ছাড়া, ঢেঙ্কানলে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে বিশাল উত্সব হয়। ওই সময় যেতে পারলে, সেই পার্বণের মেজাজ ও মাধুর্য অনুভব করতে পারবেন।

কপিলাস (Kapilas)

৪৫৭ মিটারের খাড়াই পাহাড়। পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে, মহাদেব চন্দ্রশেখরের মন্দির। মন্দিরে যাওয়ার দুটি পথ রয়েছে। গাড়িতে গেলে, পাহাড়ের পাকদণ্ডী রাস্তা দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার উঠতে হবে। আর দ্বিতীয় রাস্তা হল হাঁটার সিঁড়িপথ। ১৩৫২টি সিঁড়ি পার করলে মন্দিরের কাছে পৌঁছবেন।

পাহাড়ের মধ্যেই রয়েছে, বেশ কিছু প্রাচীন গুহা। আর সেই সমস্ত গুহার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, পৌরাণিক কিংবদন্তী গল্পগাথা। কপিলাস পাহাড়ের সঙ্গে নাম জড়িয়ে রয়েছে, শ্রীধর স্বামীর। তিনি ভাগবতের প্রচার শুরু করেন। মহিমা গোঁসাই নামে বৈষ্ণব ধর্মের একটি শাখা প্রবর্তন করেন।

জোরান্ডা (Joranda)

মহিমা ধর্মের প্রধান কার্যালয় জোরান্ডাতেই। মাঘী পূর্ণিমার দিন এখানে বেশ ধূমধাম উত্সব হয়। মহিমা শাখার উপাসকদের তৈরি বেশ কিছু মন্দির রয়েছে এখানে। বছরের বৃহত্ উত্সবের সময় কৌপীনধারী সাধকদের দেখা মেলে এখানে।

সপ্তশয্যা (Saptasajya)

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য স্থান সপ্তশ্যা। ঢেঙ্কানলে শহর থেকে ১১ কিমি দক্ষিণে রয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্র। কিংবদন্তী রয়েছে, রামায়নের নির্বাসিত পর্বে, রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতা এখানে কিছুদিন বসবাস করেন। পাহাড়ে রঘুনাথের মন্দিরের পাশাপাশি, রামসীতার মন্দিরও রয়েছে। রামের মন্দির তৈরি করান ঢেঙ্কানলের রানি রত্নাপ্রভাদেবী। প্রতি বছর রামনবমীর দিন এখানে বিশাল উত্সবের আয়োজন হয়। এবং বহু ভক্ত ভিড় জমান।

যতননগর ভৌতিক রাজপ্রাসাদ- (Jatannagar Haunted Palace)

ঢেঙ্কানলের আরও একটি আকর্ষণীয় জায়গা হল, যতননগর ভৌতিক রাজপ্রাসাদ। পাহাড়ের চূড়ায়, একাকী কঙ্কালসার দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক প্রাসাদ। নির্জন নিরালা, পাহাড়ি পথ অরণ্যে ভরা। পুরো পরিবেশটাই গা ছমছমে। এই কঙ্কালসার প্রাসাদকে দেখলেই এক লহমায় মনে হতেই পারে, যেন কোনও ভৌতিক নগরী এসে পৌঁছেছেন।

এমন বিচিত্র দর্শনের রাজপ্রাসাদকে দেখে লোকমুখে, কিছু গল্প কাহিনী জন্ম নিয়েছে। কথিত রয়েছে, এই প্রাসাদের মধ্যে ৯৯টি ঘর ছিল, একদিন পরিবারের সবাই আচমকা উধাও হয়ে যায়। তার পর থেকেই পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে প্রাসাদ।

যদিও এই রাজবাড়ির উত্তরসূরি এখনও বেঁচে রয়েছেন। তাঁদের মত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এই প্রাসাদ তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধের সময় দেশজুড়ে ডামাডোল শুরু হয়। ফলে পুরো রাজপরিবার চলে আসেন কটকে। ফলে, ছেড়ে আসতে হয় ওই প্রাসাদ।

আরও একটি ঐতিহাসিক মত রয়েছে, এই রাজারা ছিলেন ব্রিটিশদের পক্ষে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বহু স্থানীয় আদিবাসী জনজাতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। ফলে, রাজ পরিবারকে ছেড়ে চলে আসতে হয়।

কীভাবে যাবেন? (Dhenkanal how to go)

হাওড়া থেকে পুরীগামী যে কোনও ট্রেনে ভুবনেশ্বর বা কটকে নেমে, সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা বাসে যেতে পারেন ঢেঙ্কানল। এছাড়া বাবুঘাট থেকেও দুরপাল্লার বাস যাচ্ছে, সেখানেও মেলে ঢেঙ্কানলের বাস।

থাকবেন কোথায়?

ঢেঙ্কানল বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি, কয়েকটি হোটেল রয়েছে, বুকিঙের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন। স্থানীয় এলাকা ঘুরে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।

পুরো সফর পরিকল্পনা সাজানো, হোটেল ও গাড়ি বুকিঙের জন্য সাহায্য নিতে 9073503958 নম্বরে ফোন করতে পারেন। (Travelweekbazar)