অর্বিট ডেস্ক– ডিজিটাল ইন্ডিয়া, গালভরা এই নাম কি আগামী দিনে সত্যিই সুখকর হতে চলেছে? নাকি ডেকে আনছে বিপদের হাতছানি!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পরেই, যে বিষয়টিতে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছেন তা হল, ডিজিটাল ইন্ডিয়া। এক শ্রেণি গবেষকদের মত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের ফলে দুর্নীতি যত কমবে, ততটাই অর্থনীতির দিকে দিয়ে শক্তিশালী হবে। সত্যি কি তাই হচ্ছে একবার আসল সত্যটা দেখে নেওয়া যাক। দেশের যতগুলি মৌলিক পরিষেবা রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ ভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত, সেখানে কার্যত বলপূর্ব জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল পরিষেবা। আর এতেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পুরো দেশটাই হয়ে উঠছে মেশিন নির্ভর। আর তাতেই চলছে দেদার লুঠ। ঠিক কীভাবে ঘটছে ঘটনা? এ যেন ক্যান্সারের মতো ঘাত বসাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে, একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন। পুরোটাই সন্তর্পণে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কর্পোরেটদের হাতে।
গত লক ডাউন পর্বে বহু মানুষ ইউপিআইয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেছেন। ফলে সরকারের ঘরে এসেছে বিপুল মুনাফা। আর এটাই একটা বড় সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছে কেন্দ্র। এমনকি অতি সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সিকে নিষিদ্ধ করতে বিল আনতে চলেছে, সেই সঙ্গে দেশের মধ্যে ডিজিটাল কারেন্সি আনারও পরিকল্পনা নিচ্ছে কেন্দ্র।
অর্থাত অভিসন্ধি পরিষ্কার। এখন এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, এতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা গভীরে। এ বিষয়ে অর্নীতিবিদ অনিল সরকার বলেন, ধরা যাক আপনি বাজারে যাচ্ছেন, সব্জি, আলু, পটল, পিঁয়াজ আরও যাবতীয় জিনিস কিনলেন, দোকানদারদের দিলেন ১৫০ টাকা। এখানে বাড়তি আপনি কোনও খরচ করলেন না। কিন্তু এই টাকা আপনি যখন ডিজিটাল প্লাটফর্মে দেবেন, আপনার ৩ টাকা থেকে ১০ টাকা বা শতাংশ হারে কাটা হবে।
আমাদের দেশে যত ধরণের কর ব্যবস্থা রয়েছে, তা বহু দেশেই নেই। অথচ পরিষেবা সেই তুলনায় নেই। জন্মশংসাপত্র পাওয়া থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে কোনও না কোনও রূপে কর দিতে হয়। এখন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে নতুন বাজার করছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। সেই কারেন্সি কে বা কারা ম্যানেজ করে কেউ জানে না। অর্থের বিনিময়ে অনেক খেলোয়াড়, তারকা, ইনফ্লুয়েন্সার প্রমোট করে। বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝানো হয়, এটি হ্যাক করা যায় না, তথ্য সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু দেখা যায়, সেটিও শেয়ার বাজারের মতো পড়ে যায়। অর্থাত কেউ না কেউ এর মুনাফা নিয়ে চোরা পথে বেরিয়ে যাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদী সেই দিকটাই আটকাতে চাইছে, যাতে দেশের টাকা বাইরের হাতে না চলে যায়। পরিবর্তে এর জনপ্রিয়তাকে মাথায় রেখে নতুন ডিজিটাল কারেন্সির পথ খুলতে চলেছে, অর্থাত এই খেলা যাতে দেশের কর্পোরেটের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর এটা যদি হয়, তাহলে সারদা, সত্যমের মতো চিটফান্ড ব্যবস্থা নতুন রূপে ভয়াবহ আকার নেবে।