পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি ভারত, এমন একটা দেশ। যার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি ও কিংবদন্তী। কিছু পাথরের মধ্যে খোদাই করা, কিছু হারানো নিশান।
মধ্যপ্রদেশের ভিন্ড জেলায় অবস্থিত, এক অদ্ভুত কেল্লা, গোহাদ দুর্গ। বৈশালী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা প্রায় ৫০০ বছর আগের এক দুর্গ, যা আজও তার স্বতন্ত্র ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে রয়েছে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, অনামী অখ্যাত এই দুর্গের কিছু হারানো ইতিহাস। তোমর শাসক রাজা মানসিং, জাঠ রাজা দ্বিতীয় সিংদেওকে গোহাদের জমিদারি দেন। তার পরেই রাজা দ্বিতীয় সিংদেও ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এই কেল্লার নির্মাণ করেন। গোহাদের জাঠ শাসকদের রানা উপাধীও দেওয়া হয়।

গোহাদ কেল্লা ভারতের অদ্ভুত স্থাপত্যকীর্তির অনন্য দাবিদার। মূলত এলাকার সুরক্ষাকে মাথায় রেখেই গোহাদ কেল্লার স্থান নির্বাচন করা হয়। কেল্লাটি যদি ভালো করে দর্শন করা হয়, বোঝা যাবে, পুরোটাই গোলাকার। এর পিছনে অবশ্য একটা বড় কারণ হচ্ছে, কেল্লা যে জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, তার ঠিক পাড়ে বয়ে গিয়েছে বৈশালী নদী, আর এই নদী ঠিক এই জায়গাতেই গোলাকার মোড় নিয়েছে। ফলে, এই জায়গার অন্যতম সুরক্ষাকবচ স্বয়ং বৈশালী নদী।
দুর্গের ভিতর এখনও বেশ কিছু ইমারত অবশিষ্ঠ রয়েছে। রানি মহল, রাজা মহল, দেওয়ানে আম, দেওয়ানে খাস, পুজা ঘর এবং নৃত্যঘর। কেল্লার মধ্যে রয়েছে আখাড়া এবং পানীয় জলের জন্য কুয়ো। রয়েছে রানিদের জন্য হামাম বা স্নানঘর। কিংবদন্তী রয়েছে, হামাম লাগোয়া একটি সুরঙ্গ পথও রয়েছে, যাতে রাজমহলের নারীদের সুরক্ষার জন্য তৈরি।

এই কেল্লায় মোট ১১টি মূল দরজা রয়েছে। আর দরজাগুলির নামও স্থানীয় গ্রামের নামে রাখা। কেল্লা নির্মাণে ইটের পাশাপাশি লাল ও সাদা পাথরের ব্যবহার দেখা যায়। ভগ্নপ্রায় কেল্লার অবশিষ্ঠ দেওয়া ইরানি স্থাপত্যের মিশ্রণে তৈরি জন্তু জানোয়ার ও গাছগাছালির নকশা নজরে আসে।
শুরু হচ্ছে ভ্রমণ নিয়ে মজাদার আড্ডা পর্ব, থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার এবং নিখরচায় ভ্রমণের সুযোগ, অংশ নিতে যোগাযোগ করুন আমাদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে
কেল্লার নির্মাণ শৈলী দেখেই বোঝা যায়, রাজা দ্বিতীয় সিংদেও এলাকার ও নাগরিক সুরক্ষা নিয়ে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পুরো কেল্লা জুড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়াল নজরে আসে। বাইরের সুরক্ষা দেওয়া পুরোটাই পাথরে নির্মিত এবং ১০ মিটার উঁচু। কেল্লার দ্বিতীয় প্রচীর মাটি দ্বারা নির্মিত, যা অদ্ভুত স্থাপত্যকলার এক অঙ্গ।
বর্তমানে এই কেল্লা এক ভগ্নপ্রায় ভৌতিক কেল্লায় পরিণত হয়েছে, তবু এখনও এর অবশিষ্ঠ্য অংশ বার্তা দেয়, দুর্গের ঐতিহ্য ও আভিজাত্য কতটা ছিল। গোহাদ দুর্গ মধ্য ভারতের জাঠ শাসকদের এক অনন্য স্থাপত্য। ২০১৭ সালে গোহাদ কেল্লার সংরক্ষণের জন্য ইউনেস্কো, এশিয়া প্যাসিফিক হেরিটেজ পুরস্কার প্রদান করে।