বর্গভীমা মন্দিরের পরিচয়
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রধান তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বর্গভীমা মন্দির। এটি ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি, যেখানে দেবী সতীর বাঁ চোখের বল পড়েছিল বলে কথিত আছে। এই মন্দির দেবী দুর্গার এক রুদ্ররূপের উপাসনাস্থল এবং বহু শতাব্দী ধরে ভক্তদের আস্থার প্রতীক হয়ে রয়েছে।
ইতিহাস ও স্থাপত্য
বর্গভীমা মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সঠিক সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না, তবে অনুমান করা হয় এটি প্রাচীন গুপ্ত বা পাল যুগে নির্মিত। মন্দিরটি অনেকবার সংস্কার করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি একটি সাধারণ নবরত্ন স্থাপত্যশৈলীর মন্দির।
পৌরাণিক কিংবদন্তি
পুরাণ অনুযায়ী, রাজা দক্ষের যজ্ঞে স্বামী মহাদেবের অপমান সইতে না পেরে সতী নিজেকে উৎসর্গ করেন। শোকাহত শিব সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করলে মহাবিশ্ব ধ্বংসের উপক্রম হয়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিষ্ণু চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করেন। সেই খণ্ডগুলির মধ্যে সতীর বাঁ চোখের বল এই বর্গভীমা স্থানে পতিত হয়, এবং তখন থেকেই এটি শক্তিপীঠ রূপে পূজিত।


মন্দিরে পূজা ও উৎসব
বর্গভীমা মন্দিরে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজা, কালীপূজা ও অমাবস্যা তিথিতে এখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। এছাড়া প্রতি বছর বৈশাখ মাসে বিশেষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা ধর্মপ্রাণ ভক্তদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
কীভাবে পৌঁছাবেন?
- রেলপথে: কলকাতা থেকে মেদিনীপুর পর্যন্ত ট্রেনে এসে, সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহণে মন্দিরে পৌঁছানো যায়।
- সড়কপথে: কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরত্ব, যা গাড়িতে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে অতিক্রম করা যায়।
উপসংহার
শক্তিসাধনার এক অনন্য ক্ষেত্র হিসেবে বর্গভীমা মন্দির শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্যও এক অনন্য স্থান। যারা শক্তিপীঠ দর্শনে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি অবশ্যই একবার ঘুরে দেখার জায়গা।
