উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ের কোল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি পবিত্র বদ্রি মন্দির – বদ্রীনাথ, যোগধ্যন বদ্রি, ভবিষ্য বদ্রি, আদি বদ্রি ও বৃদ্ধা বদ্রি – সম্মিলিতভাবে পরিচিত পঞ্চ বদ্রি নামে। এই মন্দিরগুলো ভগবান বিষ্ণুর বিভিন্ন রূপের উপাসনার কেন্দ্র, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত পবিত্র দর্শনের জন্য ভ্রমণ করেন।
পঞ্চ বদ্রি মন্দিরের ইতিহাস ও পরিচয়
১. বদ্রীনাথ মন্দির
উপস্থিতি: চামোলি জেলায় অলকানন্দা নদীর তীরে।
ইতিহাস ও গুরুত্ব:
এই মন্দিরটি অষ্টম শতকে শ্রী আদিশংকরাচার্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং এটি চারধাম তীর্থযাত্রার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ভগবান বিষ্ণু এখানে শালগ্রাম শিলা রূপে পূজিত হন। মন্দিরের উল্লেখ মহাভারত ও বিষ্ণু পুরাণে পাওয়া যায়।



২. যোগধ্যন বদ্রি
উপস্থিতি: পাণ্ডুকেশ্বর, বদ্রীনাথের পথে।
ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনি:
এই স্থানটি সেই স্থানে অবস্থিত যেখানে পাণ্ডব রাজা পাণ্ডু তপস্যা করে মোক্ষ লাভ করেছিলেন। এটি শীতকালে বদ্রীনাথ মন্দিরের বিকল্প পূজাস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩. ভবিষ্য বদ্রি
উপস্থিতি: চামোলি জেলার তপোবন অঞ্চলে।
কিংবদন্তি:
মনে করা হয়, এক সময় ভবিষ্যতে বদ্রীনাথ মন্দির মানুষের পক্ষে অপ্রাপ্তিযোগ্য হয়ে গেলে ভগবান বিষ্ণু এই মন্দিরে পূজিত হবেন। এটি এখনও অপেক্ষাকৃত অগম্য তীর্থস্থান।
৪. আদি বদ্রি
উপস্থিতি: কর্ণপ্রয়াগ থেকে ১৭ কিমি দূরে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মন্দিরগুলি গুপ্ত রাজবংশের সময় নির্মিত এবং আদিশংকরাচার্য এখানে বিষ্ণু উপাসনার প্রচলন করেন। এখানে বিষ্ণুর মূর্তি স্বর্ণের এবং চতুর্ভুজ রূপে পূজিত।
৫. বৃদ্ধা বদ্রি
উপস্থিতি: জোশীমঠের কাছে।
কিংবদন্তি:
এখানে ভগবান বিষ্ণু বৃদ্ধ ঋষির রূপে পূজিত হন। বলা হয়, একবার বদ্রীনাথ মন্দির থেকে মূর্তি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং পরে এটি বৃদ্ধা বদ্রিতে পাওয়া যায়।
পৌরাণিক কিংবদন্তি
পুরাণ অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু কঠোর তপস্যার জন্য হিমালয়ে আসেন এবং তিনি একটি বড় বটগাছ (বদ্রি) এর নিচে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। মা লক্ষ্মী তাকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে বদ্রি বৃক্ষের রূপ নেন, এবং তাই স্থানটি বদ্রীনাথ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে, মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, পাণ্ডবরা স্বর্গারোহণের আগে বদ্রীনাথে গিয়ে তপস্যা করেন এবং এই পাঁচটি বদ্রি তাদের বিভিন্ন ধাপের সাক্ষী।
উপসংহার
পঞ্চ বদ্রি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক ও পৌরাণিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি প্রকৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে ভগবান বিষ্ণুর এই পাঁচটি রূপ এক অতুলনীয় তীর্থযাত্রার অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
