আপনি কি খেয়াল করছেন, স্নান করতে গিয়েছে আগের থেকে চুল বেশি ঝরছে! তাহলে এখনই সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। মাত্র কয়েকটি পয়েন্ট মাথায় রাখলেই এই চুল ঝরে পড়া থেকে বাঁচতে পারেন। আপনি কী করে বুঝবেন? চুল আঁচড়াতে গিয়ে আগের থেকে বেশি চুল উঠছে। রান্নাঘর, শোবার ঘরে, ঝরে পড়া চুলের প্রবল্য বেশি, বা ঘুম থেকে ওঠার পর বালিশের ওয়াড়ে লেগে রয়েছে চুল।
চুল ঝরার সমস্যা খুব বড় নয় এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরিমাণে বেশি হলে অবশ্যই চিন্তার। চুল ঝরে পড়ার পিছনে প্রধান কারণ হল, শরীরে পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, যে জলে আপনি স্নান করেন, তা কতটা স্বাস্থ্যকর এবং জেনেটিক সমস্যা রয়েছে কিনা ও আপনি কী ধরণের পণ্য ব্যবহার করছেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কী কী কারণে চুল ঝরে পড়ে।
রেস্টিং ফেজ
আমাদদের প্রত্যেকের মাথায় যত চুল রয়েছে সব কটির বাড়বৃদ্ধি হয় না। প্রায় ৯০ শতাংশ চুলের বৃদ্ধি হয়, বাকি ১০ শতাংশ রেস্টিং ফেজে থাকে। ফলে একটা সময়ের পর সেই চুল গুলি ঝরে যায়। বিশেষজ্ঞদের মত, দৈনিক মানুষের ২০-৩০টি চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক। তার বেশি হলেই গুরুত্ব দিতে হবে। দেখতে হবে শারীরিক কোনও সমস্যা থেকে এটি হচ্ছে কিনা। মাথার করোটিতে কোনও স্কিন ডিজিজ হয়েছে কিনা।
খাদ্যতালিকার উপকরণ কি চুলের সর্বনাশ ডেকে আনছে?
আমাদের খাদ্যাভাসের সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া প্রভাবিত হয়। ভিটামিনের ঘাটতি ও পুষ্টির অভাবে চুল ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। চিনিযুক্ত খাবার বা রিফাইন্ড খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে চুলের যত্ন নিতে খাদ্যতালিকার উপকরণে থাকা চাই প্রোটিন, ওমেগো ৩, ভিটামিন এবং মিনারেলস। এগুলি টুলের গোড়াকে শক্ত ও সিল্কি করে তোলে।
অতি বেগুনিরশ্মী
সূর্যের আলোর সঙ্গে পৃথিবীতে পৌঁছন অতি বোগুনিরশ্মী শুধুমাত্র স্কিনেই প্রভাব ফেলে তা নয়, চুলেও প্রভাব ফেলে। অতি বেগুনীরশ্মী আপনার চুলকে ভঙ্গুর, দুর্বল এবং শুষ্ক করে দেয় যার কারণে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। প্রবল রোদে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা জরুরি।
অনামী নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার।
চুল ঝরে পড়ার আরও একটি বড় কারণ অনামী ও নিম্নমানের পণ্য। বহু স্থানীয় কোম্পানি রয়েছে, যাঁরা শ্যাম্পু, সাবান, কন্ডিশনার প্রস্তুত করে থাকেন। যেটি অত্যন্ত সাধারণ ফর্মুলায় তৈরি। তাদের শ্রমিকরাও অদক্ষ। অর্থাত কেমিক্যাল কম্পোনেন্টের মিশ্রন ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। এর ফলে ওইসব পণ্যের মানও ঠিক থাকে না।
আরও পড়ুন- যে ওষুধটি খাচ্ছেন, সেটি বাতিল কিনা জানেনতো?
যদিও কসমেটিক্স অ্যাক্ট অনুসারে ফর্মুলা ঠিকঠাক মেন্টেন করা জরুরি। যেমন শ্যাম্পুতে সোডার পরিমাণ বেশি থাকলে চুলের ক্ষতি করবেই। তাই বহু নামজাদা কোম্পানি, ভিন্ন গোত্রের চুলের সামঞ্জস্য রেখে ভিন্ন পণ্য বাজারে ছাড়েন।তাই পণ্য কেনার আগে ভালো করে দেখুন, কী কী উপাদান কতটা আছে আর সেই উপাদান আপনার চুলের পক্ষে ঠিকঠাক কিনা।
কলপ বা রং করা।
অনেকের চুলেই অল্প বয়সে পাক ধরে যায়, ফলে চুলে কালার করেন আবার অনেকে এমনিতেই কালার করে থাকেন। সব সময় মনে রাখতে হবে, সেইসব রং কিন্তু কেমিক্যাল। এর অত্যধিক ব্যবহারের ফলে চুলের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এছাড়াও অনেকে চুল শুকোনোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন, এর ফলেও চুলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে উচিত পাখার হাওয়াতে চুল শুকোনে বা কুলিং স্যুইচ ব্যবহার করা।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আপনি যদি কোনও অসুস্থার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স করেন বা কোনও সার্জারি করিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে চুল ঝরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে। তাই এমন কোনও ঘটনা থেকে চুল জরে পড়ে থাকলে, কটা দিন বিশ্রেম নিয়ে প্রোটিন, মিনারেলযুক্ত খাবার খেয়ে দেখুন। আর তাতেও যদি সমস্যা না মেটে তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো
আমাদের অনেকের অভ্যাস রয়েছে, স্নান সেরে ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানোর। এটা একদম উচিত নয়। কারণ ভেজা চুল অনেক বেশি খসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, গোড়া নরম থাকে বলে। পুরোপুরি চুল শুকনোর পরেই চুল আঁচড়ানো উচিত।
হার্বালের নামে ধোঁকা
স্কিন ডিজিজ বা শারীরিক সমস্যার থেকে যদি চুল ঝরে পড়ে তাহলে চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। অকালে চুল পাকা, ঝরে পড়া, খুস্কির সমস্যা এমন জটিল কোনও সমস্যা থাকলে, সবচেয়ে ভালো কাজ করে হোমিওপ্যাথিতে। তবে কিছুজনের ক্ষেত্রে রোগ সারতে সময় লাগতে পারে। কারণ রোগ যত পুরনো হবে, চিকিত্সার মেয়াদও ততই বাড়ে। আর বাজারে বহু পণ্য রয়েছে, যেগুলি আয়ুর্বেদিক, হার্বাল নামে চালানো হয়। সেগুলি থেকে সাবধান। অধিকাংশ প্রোডাক্টই হার্বাল নয়। সেগুলি ভালোর থেকে খারাপ করে বেশি। তাহলে প্রশ্ন আগামী দিনে আসল হার্বাল প্রোডাক্ট চিনবেন কী করে? সরকারি বিধি কী বলছে? আলোচনা করবো আগামী পর্বে।