Breaking News

ভূবনগিরি কেল্লা, চালুক্য রাজবংশের অনন্য কীর্তি, হায়দরাবাদ গেলে অবশ্যই দেখুন

ভোঙ্গির দুর্গ: ইতিহাস, স্থাপত্য ও ঐতিহ্য

ভোঙ্গির দুর্গ (Bhongir Fort) ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের নালগোন্ডা জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক দুর্গ, যা প্রায় এক হাজার বছরের পুরনো। এটি ভোঙ্গির শহরের কেন্দ্রস্থলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। কাকতীয় রাজবংশের সময় এই দুর্গ নির্মিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহু রাজবংশের হাতে এটি কৌশলগত কারণে ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে ভূবনগিরি কেল্লাও বলা হয়।

দুর্গের ইতিহাস

ভোঙ্গির দুর্গ নির্মাণ করেন ১০৭৬ খ্রিস্টাব্দে চালুক্য রাজবংশের শাসক ত্রিভুবনমল্ল বিক্রমাদিত্য (Tribhuvanamalla Vikramaditya VI)। প্রাচীনকালে এটি “বুংগিরি” নামে পরিচিত ছিল, যা পরে পরিবর্তিত হয়ে “ভোঙ্গির” হয়েছে। চালুক্যদের শাসনের পর এই দুর্গ বহু শাসকের হাতে গিয়েছে, যার মধ্যে কাকতীয় রাজবংশ, বাহমনি সুলতান, বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং গোলকোন্ডার কুতুব শাহী শাসকদের নাম উল্লেখযোগ্য।

১৬শ শতকে গোলকোন্ডার কুতুব শাহী শাসকরা দুর্গটির প্রতিরক্ষা আরও মজবুত করেন। পরে ১৭শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে এটি চলে যায়, যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারতে তার সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় দুর্গটি কৌশলগত গুরুত্ব হারায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী

ভোঙ্গির দুর্গ একটি বিশাল একক গ্রানাইট শিলার ওপর নির্মিত, যা একে স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা দেয়। দুর্গের প্রবেশদ্বারটি একটি বিশাল পাথুরে কাঠামোর মধ্যে খোদাই করা হয়েছে, যেখানে প্রতিরক্ষামূলক টাওয়ার ও গোপন সুড়ঙ্গের ব্যবস্থা ছিল।

দুর্গের ভেতরে রয়েছে প্রাচীন জলাধার, দুর্গের সেনাদের জন্য নির্মিত বিশ্রামস্থল এবং সৈন্যদের জন্য নিরাপদ চলাচলের জন্য তৈরি করা সুড়ঙ্গপথ। এই দুর্গের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর গোপন সুড়ঙ্গ, যা দুর্গ থেকে বাইরের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ভোঙ্গির দুর্গের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন গুরুত্ব

বর্তমানে ভোঙ্গির দুর্গ তেলেঙ্গানার একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ইতিহাসপ্রেমী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান। দুর্গে উঠতে গেলে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে, তবে উপরে পৌঁছালে আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

তেলেঙ্গানা পর্যটন বিভাগ এই দুর্গকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এটি রাজ্যের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

উপসংহার

ভোঙ্গির দুর্গ কেবল একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়, এটি তেলেঙ্গানার গৌরবময় অতীতের সাক্ষী। শত শত বছর ধরে এটি বিভিন্ন সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের স্বাক্ষী হয়েছে। বর্তমানে এটি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে, যেখানে ইতিহাস, স্থাপত্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়।

আপনি যদি ভোঙ্গির দুর্গ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য বা ছবি চান, জানাতে পারেন!

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!