অর্বিট নিউজ ডেস্ক- ভারতের বুকে প্রচীন কাল থেকে গাঁথা হয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, গল্প কাহিনি ও কিংবদন্তী। প্রকৃতির মায়াময় খেলায় জন্ম নিয়েছে নানা দেবস্থান। কোথাও স্বয়ম্ভু মহাদেব, কোথাওবা প্রাচীন লৌকিক দেব দেবী। গুজরাটের আনন্দ এমনই একটি প্রাচীন এলাকা যার নাম জুড়ে রয়েছে মহাভারতে। এই আনন্দেই রয়েছে এক অদ্ভুত দর্শনের রহস্যময় স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ।
জিতোদিয়া বৈজনাথ মহাদেব মন্দিরের পুজারি তিলকভাই গোস্বামীর দাবি, এই মন্দির প্রায় ২ হাজার বছরের পুরনো। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গটি অদ্ভুত দর্শনের এটি স্বয়ম্ভুলিঙ্গ তবে শিবলিঙ্গে ২৫টি ছিদ্র রয়েছে। এখান থেকেই নিরন্তর বেরোতে থাকে পবিত্র জল। স্থানীয়দের মতে এটি পবিত্র গঙ্গাজল।
মন্দিরচত্বরে দেখা যায়, কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে। পাশেই রয়েছে সাইবাবর মন্দির ও হনুমান মন্দির। মন্দির ও দেবস্থানকে ঘিরে রয়েছে দুটি জনপ্রিয় কিংবদন্তী। প্রথমটি হল, মহাভারতকালের। প্রাচীনকালে এই অঞ্চল ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ, বনবাসকালে একটা সময়ে এখানেই থাকতেন পাণ্ডবেরা। এই জঙ্গলকে হিড়িম্বা বনও বলা হত। সেই সময় ভীম এই শিবলিঙ্গের পুজো করেছিলেন। তারও অনেক পরে এখানে স্থানীয় জনজাতিরা গরু চড়াতে আসতে। এখানে রয়েছে দ্বিতীয় কিংবদন্তী।
আরও পড়ুন- রাজস্থান সার্কিট সফরে দেখে নেওয়া রাজপুতদের রাজকাহিনি
আরও পড়ুন- জানুন কালাপানি কারাগারের অজানা কথা, সঙ্গে আন্দামানের ট্যুর প্ল্যান
একবার এক গোপালক, গরু চরাতে এসে দেখে, একটি গরু একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, আর তার বাঁট থেকে নিরন্তর দুধ ঝরে পড়ছে। বিষয়টি একদিন দুদিন নয়, পরপর বেশ কয়েক দিন ধরে এই দৃশ্য দেখার পর গ্রামে খবরটি বলে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় রাজা সিন্ধরাজজির কানে যায়। তিনিও একদিন মন্ত্রী সান্ত্রী নিয়ে জঙ্গলে এসে এক দৃশ্য দেখেন। তারপর তিনি দাবি করেন, এখানে নিশ্চয়ই কোনও দৈব শক্তি রয়েছে। রাজার নির্দেশে জায়গাটি খোঁড়া হয়, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে একটি শিলাখণ্ড।
আরও পড়ুন- কাশ্মীর ও হিমাচল কীভাবে বেড়াবেন, রইল ট্যুর পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন- অপরূপ সৌন্দর্যের খনি গাড়য়াল, কীভাবে বেড়াবেন?
রাজার নির্দেশ দেন জঙ্গল থেকে শিলাখণ্ড তুলে এনে প্রাসাদ এলাকায় মন্দির গড়ে প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু বহু খোঁড়াখুঁড়ির পরেও, পাথরের অন্তে পৌঁছন যাচ্ছে না দেখে রাজাকে খবর দেওয়া হয়। সেদিনই রাতে রাজা স্বপ্নাদেশ পান, মন্দির গড়তে হলে, প্রাসাদে নয়, ওই জঙ্গলেই নির্মাণ করতে হবে। তারপর নির্মাণ করা হয় সেই মন্দির।
মুঘল আমলে বহুবার এই মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে, মৃত্যু বরণ করেছেন পুজারি থেকে সাধকদের। তাদের সমাধিও মন্দির চত্বরেই রয়েছে।
আরও পড়ুন- চলুন মেঘ সূর্যের দেশ অরুণাচল
কীভাবে যাবেন- গুজরাটের আনন্দ শহর থেকে ১৫ কিমি পথ, গাড়ি ভাড়া বা অটো ভাড়া করে যাওয়া যায়।
সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। যদি অভিষেক পর্ব দেখতে চান বা শিবলিঙ্গ স্পর্শ করতে চান তাহলে দুপুর ১২ মধ্যে পৌঁছতে হবে। শ্রাবণ মাসে এখানে বেশ বড় উতসব হয়। দূরদূরান্ত থেকে বহু দর্শনীর্থী আসেন পুজো দিতে। বহু সাধক আসেন প্রায় ৪০ দিন ধরে পুজো পাঠ, হোম যজ্ঞ করেন।