অর্বিট ডেস্ক– মাত্র ৫ হাজার টাকায় উইকেন্ডে ভ্রমণ আবার বিদেশ? বিষয়টি শুনেই হয়তো অনেকের হাসি পাচ্ছে বা ভাবছেন মিথ্যে কথা, তাহলে আপনাকে পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে হবে। অত্যন্ত সহজ ও সরল পথে অনায়াসে উইকেন্ডে ঘুরে আসতে পারেন খাস বাংলাদেশের একটা অংশ।
যাঁরা কলকাতা ও শহরতলি থেকে যাবেন, তাঁরা মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন যশোর ও কুষ্টিয়া। যশোরে আপনারা দেখে নিতে পারবেন, সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক ভিটে, ও কপোতাক্ষ নদ। যা আজ মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। আর কুষ্টিয়াতে দেখে নিতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি, লালন ফকিরের মাজার, মোহিনি মিল, জগতি রেল স্টেশন।
তাহলে শুরু করা যাক যাত্রা কীভাবে করবেন আর খরচ কোথায় কেমন লাগবে। এই যাত্রা করতে হলে, প্রথমেই আপনার থাকতে হবে পাসপোর্ট। যার মেয়াদ অন্তত ৬ মাস রয়েছে আর অন্তত দুটি পাতা খালি রয়েছে।
ট্যুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে কোনও খরচ নেই। তবে ভিসা পেতে প্রায় রাত জেগে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের অফিসে লাইন দিতে হবে, ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেওয়ার জন্য। ঠিকানা 9, Circus Ave, Lower Range, Bangabandhu Sheikh, Elgin, Kolkata, West Bengal 700017 ।
আর যাঁরা লাইন দিতে পারবেন না, তাঁরা এজেন্টের সাহায্য নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ট্যুরের বাজেটের অতিরিক্ত হতে পারে এই খরচ। পাসপোর্ট ও ভিসা হয়ে গেলে। পরিকল্পনা মতো, একদম সকাল সকাল শিয়ালদহ থেকে বনগাঁয়ের লোকাল ট্রেন ধরুন।
বনগাঁ স্টেশনে নেমেই, বাইরে বেরিয়ে অটো ধরে সোজা চলে আসুন পেট্রাপোল বর্ডার। বাইরে দেখবেন অনেক বাস দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে অনেক টাকা এক্সচেঞ্জের জায়গা রয়েছে, যে কোনও একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ভারতীয় মুদ্রা দিয়ে বাংলাদেশ মুদ্রা নিয়ে নিন।

মুদ্রা ভাঙানো হলে, ঢুকে পড়ুন ইমিগ্রেশন সেকসনের দিকে। একটি ছোট ফর্ম ফিলাপ করে, পাসপোর্টের সঙ্গে রাখুন। লাইন দিয়ে ভিতরে গিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট ভিসা চেক করবে। আর কিছু সরল প্রশ্ন করবে, তার উত্তর দিয়ে দেবেন।
এরপরেই পাসপোর্টে ছাপ মেরে আপনাকে ছেড়ে দেবে। এরপর আপনি যাবেন, লাগেজ চেকিং সেকসনে। স্ক্যানারে ব্যাগ দেবেন, আপনাকেও নিরাপত্তারক্ষী চেক করে ছেড়ে দেবে। ব্যাগে এমন কোনও জিনিস রাখবেন না, যাতে কাস্টমচেকিং আটকায়।
ভারতের অংশে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস চেকিং হয়ে গেলে, পৌঁছবেন নো ম্যান্ড ল্যান্ডে। দেখবেন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। অনুমতি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে, পৌঁছে যান, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস বিভাগে। একই পদ্ধতি
হয়ে গেলে বাইরে বেরিয়ে আসুন। ইমিগ্রেশন অফিসের কাছাকাছি কিছু সিমকার্ডের দোকান রয়েছে, সেখান থেকে সিমকার্ড নিতে পারেন। তবে আপনি নিজের নামে পাবেন না, কারও সাহায্য প্রয়োজন।
ওখান থেকে একটি টোটো ধরে চলে আসুন বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে যশোর টার্মিনালের বাস পাবেন। যশোর টার্মিনালে নেমে একটি টোটো ধরে কোতওয়ালি থাকার কাছে এসে হোটেল নিন।
এখানে সস্তা ও দামি হোটেল রয়েছে। পকেট বুঝে নিতে পারে। হোটেলে জিনিসপত্র রেখে খাওয়া দাওয়া সেরে তৈরি হয়ে নিন। হোটেল থেকে বেরিয়ে টোটো ধরে চলে আসুন আবার টার্মিনাল। সেখান থেকে কেশবপুরের উদ্দেশে বাস ধরুন।
প্রায় ঘণ্টা খানেক লাগবে, কেশবপুরে নেমে, সি এন জি বা টোটো ধরে চলে যান সাগরদাঁড়ি। পৌঁছতে সন্ধে হবে। এই ট্যুরটি যদি কষ্টকর লাগে, তাহলে একটা দিন যশোরে হোটেলে থেকে পরের দিন সকালে সাগরদাঁড়ির উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। সারা দিন কাটাতে পারেন সাগর দাঁড়িতে। সন্ধের দিকে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন, কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন।
পরের দিন, সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে টোটো ধরে চলে আসুন বাসস্ট্যান্ড, সেখান থেকে কুষ্টিয়ার বাস পাবেন। নামবেন মোজামপুর বাসস্ট্যান্ড। পাশেই কিছু হোটেল রয়েছে, খুব ভালো না হলেও চলনসই। ওখানে দুপুরের আহার সেরে একটা টোটোর সঙ্গে চুক্তি করে নিন, পুরো বেলার। বলবেন, রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি, পদ্মার পাড়, লালনফকিরের মাজার, জগতি স্টেশন, গড়াই নদীর পাড়ে পার্ক আর মোহিনী মিল দেখবেন।

এখানে মোহিনী মিল হল, এক সময় বাঙালির হাতে যে ব্যবসা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছিল, তারই নিদর্শন মোহিনী মিল। ১৯০৮ সালে মোহিনীমোহন চক্রবর্তীর হাত ধরে শুরু হয় এই মিল। একটা সময়ে এশিয়ার সবচেয়ে বড় সুতাকল হিসেবে স্বীকৃতি পায় মোহিনী মিল। পরে ১৯৬৫ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হলে, মোহিনীবাবুর পুত্র কানু চক্রবর্তীকে প্রায় এক কাপড়ে ঘর ছাড়তে হয়, সে এক কলঙ্কময় ইতিহাস।
যশোর ও কুষ্টিয়া বেড়ানো হলে, কুষ্টিয়া থেকে সরাসরি বাসে আসতে পারেন বেনাপোল। অথবা, কুষ্টিয়া থেকে যোশোর এবং যশোর থেকে বেনাপোল। বেনাপোলে ও ভারত বর্ডানে ইমিগ্রেশন কাস্টমসের কাজ মিটিয়ে অটো ধরে বনগাঁ। আবার বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ লোকাল ট্রেনে। হাতে সময় থাকলে বা বাড়তি কিছু গ্যাঁটের কড়ি খরচ করলে এই সফরে নাটোর ও রাজশাহী জুড়ে নিতে পারে।
সাধারণ মানের হোটেলের খরচ আনুমানিক ৬০০ থেকে ১০০০ বাংলাদেশী টাকা। সারাদিনের খাবার খরচ ৩০০ বাংলাদেশী টাকা। লম্বা রুটে বাসের ভাড়া ৯০ থেকে ১৩০ বাংলাদেশী টাকা। শর্ট ডিস্টেন্সে টোটো ভাড়া ১০ থেকে ১৫ বাংলাদেশী টাকা।