মধ্যপ্রদেশের মান্ডু: অনন্য স্থাপত্যে নজির এখানে, জানুন ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থানসমূহ

মধ্যপ্রদেশের ধার জেলায় অবস্থিত মান্ডু (Mandavgarh) শহর তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, স্থাপত্যশৈলী, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত। এটি একসময় মালওয়ার রাজধানী ছিল এবং এখানকার সমৃদ্ধ স্থাপত্য ও সংস্কৃতি পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

মান্ডুর ইতিহাস

মান্ডুর ইতিহাস প্রায় ৬ষ্ঠ শতক থেকে শুরু হয়। এই শহরটির উত্থান ঘটেছিল দিল্লি সালতানতের সময় এবং পরবর্তীতে মালওয়া সুলতানদের অধীনে। ১৪০১ সালে দিলাওয়ার খান মান্ডুর রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। তবে মান্ডু তার চরম উৎকর্ষ অর্জন করে ব়াজারা বাহাদুর ও সুলতান হোসেন শাহের শাসনকালে।

মান্ডুতে রয়েছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার স্মারক, যার মধ্যে বাদশাহ বাজ বাহাদুর ও রূপমতীর প্রেমকাহিনী অন্যতম। এই প্রেমের কাহিনী আজও পর্যটকদের আবেগময় করে তোলে।

মান্ডুর প্রধান দর্শনীয় স্থান

জাহাজ মহল (Ship Palace): পানির উপর ভাসমান এক জাহাজের মতো দেখতে এই মহলটি মান্ডুর স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এটি সুলতান গিয়াসউদ্দিন খিলজির সময় নির্মিত।

হিন্দোলা মহল (Swing Palace): এই প্রাসাদটি তার বাঁকা দেওয়ালের জন্য বিখ্যাত। এটি একসময় সভাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হত।

রূপমতীর প্রাসাদ: রানি রূপমতীর বাসস্থান এবং বাজ বাহাদুরের প্রেমের সাক্ষী এই প্রাসাদটি নর্মদা নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখতে উপযুক্ত স্থান।

বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ: এটি এক সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন যা রূপমতীর প্রাসাদের নিকটে অবস্থিত। এটি প্রাচীন সংগীত ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল ছিল।

জামী মসজিদ: মান্ডুর প্রধান মসজিদ, যা দিল্লির মসজিদগুলির আদলে তৈরি। এর স্থাপত্য নিদর্শন অসাধারণ।

এক খাম্বা মহল ও দরিয়াখাঁর মাকবরার: মান্ডুর আরো এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান, যা সুলতানদের শাসনকালের সাক্ষী।

মান্ডু ভ্রমণের সেরা সময়

শীতকাল (অক্টোবর থেকে মার্চ) মান্ডু ভ্রমণের জন্য সেরা সময়। এই সময় আবহাওয়া ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক থাকে।

কলকাতা থেকে মান্ডু যাওয়ার উপায়

ট্রেনে:

প্রথম ধাপ: কলকাতা থেকে ইন্দোর পর্যন্ত ট্রেনে যান। ইন্দোর থেকে মান্ডু সড়কপথে প্রায় ২ ঘণ্টার পথ।

ইন্দোরে পৌঁছানোর জন্য প্রধান ট্রেন: হাওড়া-ইন্দোর শিপ্রা এক্সপ্রেস।

ফ্লাইটে:

কলকাতা থেকে ইন্দোরের জন্য সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়। ইন্দোর বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা প্রাইভেট গাড়িতে মান্ডু যাওয়া যেতে পারে।

সড়কপথে:

কলকাতা থেকে সড়কপথে মান্ডু যাওয়া বেশ দীর্ঘ (প্রায় ১৪০০ কিমি)। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাসে ভ্রমণ করলে একাধিক স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

থাকার ব্যবস্থা

মান্ডুতে পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট এবং সরকারি অতিথিশালা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের পরিচালিত হোটেলগুলি পরিষ্কার এবং আরামদায়ক।

পরামর্শ

মান্ডুর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন।

স্থানীয় গাইড ভাড়া করে স্থানের ইতিহাস শুনতে পারেন।

গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন, কারণ এই সময় আবহাওয়া অত্যন্ত গরম হয়।