পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ভারতের প্রচীন ইতিহাস খুঁজলে বহুমাত্রিক স্তর দেখতে পাওয়া যায়। পাহাড়, পর্বত থেকে জন্ম নেওয়া জলস্রোত ধারা যেভাবে এক সময় সাগরে গিয়ে মেশে। ঠিক সেই মতো, ভিন্ন মাত্রিক উপাস্য দেব-দেবী মিলে মিশে গিয়েছে অন্য সংস্কৃতির সঙ্গে। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন রাজা মহারাজারা শাসন করেছেন, বিস্তার করেছেন সাম্রাজ্যের। সেই সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের প্রিয় উপাস্য দেবদেবীরা। তাঁদেরও পরিধি বেড়েছে।
এই কাহিনিতে লুকিয়ে রয়েছে এমনই এক ইতিহাসের রসদ। একটি বিষ্ণু মন্দির কীভাবে শিবমন্দিরে রূপায়িত হল? তারই রূপক কাহিনি মেলে এক লৌকিক গল্পে।
অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলায় অবস্থিত শ্রী যগন্তি ঊমামহেশ্বর মন্দির। চারপাশে পাহাড়, তারই মাঝে প্রাচীন মন্দির। কথিত রয়েছে, এখানেই ছিল ঋষি অগস্ত্যের বাস, উপাসনা স্থল। তিনি চেয়েছিলেন, এই অঞ্চলে একটি বিষ্ণু (ভেঙ্কটেশ্বর) মন্দির নির্মাণ হোক। রাজা পৃষ্ঠপোষকতায় সেই কাজ শুরু হয়। কিন্তু একটি বিপদ ঘটলো, ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তি প্রতিষ্ঠার সময়ই পায়ের বুড়ো আঙুল ভেঙে যায়।

এই দেখে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন ঋষি অগস্ত্য। তিনি শুরু করলেন দেবাদিদেব মহাদেবের উপাসনা। মহাদেব তাঁকে দর্শন দেন, ঋষি অগস্ত্য জানান, কৈলাসের থেকে এই জায়গাই তাঁর জন্য শ্রেষ্ঠ। মহাদেব তখন, তাঁকে একটি পাথর দেন এবং প্রতিষ্ঠা করার জন্য বলেন, পাশাপাশি বলেন, এই জায়গা আজ থেকে কৈলাস সমতুল। তবে থেকেই এই স্থানে বিষ্ণু মন্দিরের পরিবর্তে ঊমামহেশ্বর মন্দির হিসেবেই পরিচিতি পায়।
এই মন্দিরকে ঘিরে আরও একটি লোক কাহিনি রয়েছে, একবার এই পাহাড়ি জঙ্গলে শিবের তপস্যা করছিলেন তপস্বী চিতাপ্পা। তিনি তপস্যার মাঝে দেখেন একটি বাঘ তার সামনে রয়েছে। তিনি চিনতে পারেন, শার্দুলরূপে তাঁর সামনে এসেছেন স্বয়ং মহাদেব। মহাদেবের দর্শন পাওয়া মাত্রই তিনি আনন্দে বলে ওঠেন, ‘ নেগান্তি শিবানু নে কান্তি’ অর্থাত, আমি শিবকে দেখেছি।
সেই তপস্বীর নামানুসারে পাহাড়ের কোলে একটি গুহাও রয়েছে। সময়ের সঙ্গে এই অঞ্চলসহ রাজ্যের যেই রাজা হয়েছেন, তিনি মন্দিরের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। মহাশিবরাত্রির সময় এখন বহু পুণ্যার্থী ভিড় জমান।
মন্দিরের মধ্যে আরও একটি রহস্যময় উপাদান রয়েছে, তা হল নন্দী মহারাজ। প্রকাণ্ড অবয়বের নন্দী মহারাজ ধীরে ধীরে বাড়ছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে একটি পাথরের মূর্তি কী করে বাড়তে পারে?
যদিও লোক বিশ্বাস নন্দী মহারাজের পাথরের মূর্তি বাড়ছে। এবং কলিযুগ শেষ হলে, প্রকাণ্ড শরীর নিয়ে দাঁড়াবেন। স্থানীয়দের মত, প্রতি ২০ বছরে এক ইঞ্চি করে বেড়েছেন নন্দী মহারাজ। এর ফলে পুরনো কিছু পাথরের পিলারকেও কেটে সরিয়ে দিতে হয়েছে।
মন্দির চত্বরেই দেখা মেলে যগন্তি পুষ্করীণির। একটি ছোট জলাশয়, পাহাড়ের কোল বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির জলে পরিপুষ্ঠ হয় জলাশয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সারা বছরই জলের ধারা একই থাকে। লোকমান্যতা রয়েছে, দেব স্থপতি বিশ্বকর্মা এই মন্দিরের নক্সা করেছিলেন। এই জলাশয়েই স্নান করে শিবের তপস্যা করেছিলেন অগস্ত্য।
নির্জন নিরালায় বেড়াতে চান, ঘুরে আসুন ওডিশার এই জায়গা
পাহাড়ের কোলে মোট তিনটি গুহা রয়েছে, অগস্ত্য গুহা, এখানেই রয়েছে মহাদেব ও দেবীর মূর্তি। পাশেই রয়েছে ভেঙ্কটেশ্বর গুহা, এখানে রাখা আছে, ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তি। কিংবদন্তী রয়েছে, তিরুমালা মন্দির নির্মাণের আগে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। কিন্তু ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তিতে ক্ষত দেখা দেওয়ায় আর পুজো করা হয়নি।
অনতিদূরে রয়েছে, ভীরা ব্রাহ্মণ গুহা। তপস্বী শ্রী পতুলুরি ভীরা ব্রাহ্মেন্দ্র স্বামী এখানে বসে কিছু সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।

কুরনুলের এই ঊমামহেশ্বর মন্দির চত্বরে থাকার কোনও বন্দবোস্ত নেই।
কীভাবে যাবেন? এই মন্দির অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলায়। কুরনুল শহর থেকে প্রায় ১০০ কিমি দূরে। এই মন্দির অবস্থিত বনগনপল্লি ও পিউপল্লি রাস্তায়