Breaking News

‘হাতির ফাঁসি’বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় আজও লজ্জা দেয় মানবসভ্যতাকে

অর্বিট ডেস্ক- এ যেন এক বিশ্বের কলঙ্কিত প্রহসন। মানব সভ্যতার নিষ্ঠুরতার চরম নিদর্শন। আমেরিকার টেনেসি প্রদেশের এরউইন শহর। একটি রেল স্টেশনের সামনে, ধীরে ধীরে জমায়েত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এক বিচিত্র কাণ্ডকারাখানার সাক্ষী হতে। সাধারণের মধ্যে বাড়ির বয়স্কদের সঙ্গে এসেছে শিশুরাও। প্রকাশ্য দিবালোকে দেওয়া হবে এক হাতিকে ফাঁসি। এমন একটা দৃশ্য ঠিক কেমন হতে পারে! মজাদার নাকি ভয়ঙ্কর, পুরো বিষয়টাই কল্পনার অতীত, তাই এমন এক বিরল ঘটনার সাক্ষী হতে কে না চায়!

১৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৬। কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়েছে স্টেশন ধারে। আনা হয়েছে খুনের আসামি হাতি মেরিকে। তাকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ফাঁসি দেওয়া হবে। একটা হাতিকে ফাঁসি দিতে গেলেতো আর সাধারণ ভাবে দেওয়া যায় না, তাই আনা হয়েছে রেল ইয়ার্ডের বড় ক্রেনও।

হাতির গলায় চেন পরানো হল, ধীরে ধীরে অপারেটর তুললেন ক্রেনটিকে। চূড়ান্ত গোঙানি শুরু, মাটি থেকে মেরির শরীর মাটি থেকে কয়েকফুট উঠতেই ছিঁড়ে গেল চেন। প্রবল শব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ল মেরি। ওঠার ক্ষমতা নেই। হিপ পয়েন্টে চূড়ান্ত আঘাত। মেরির গোঙানি চলছে।

ফাঁসির হুকুম রয়েছে, তা তামিল করতেই হবে। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আনা হল আরও শক্তিশালী চেন। পুনরায় বাঁধা হল মেরিকে। আবার গলায় ফাঁস লাগিয়ে তোলা হল। এবার ধীরে ধীরে মেরির আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে এলো। চামড়া ছিঁড়ে রক্ত ঝরতে লাগল। স্টেশনের পাশে প্রায় এক ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হল মেরিকে। মৃত্যু হল এক হত্যাকারীর।

দ্যা স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শোজ নামে একটি সার্কাসে শো দেখাতো মেরি। এশিয়ান প্রজাতির মেরির বয়স যখন চার, তখন তাকে কিনে আনে স্পার্ক্সের বাবা। ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে সে। পাশাপাশি স্পার্কস পরিবারের এক সদস্যও হয়ে ওঠে। গতরে যেমন বাড়তে থাকে, জনপ্রিয়ও হতে থাকে সে।

ঘটনার সূত্রপাত, টেনেসির কিংস্পোর্টে একবার সার্কাসের শো বসে। একবার রোড শোয়ের অন্য হাতির সঙ্গে শোয়ের মধ্যে খেলা দেখাতে শুরু করে মেরিও। একবার মেরি তার মাহুতের সঙ্গে রাস্তায় বেরোয়, রাজপথে চলার সময়ই, মেরির খাবার দোকানের দিকে নজর যায়। সে সেদিকে চলতে থাকে। বিষয়টি বেগতিক দেখে, মাহুত, তাকে আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাতে নিরস্ত হয় না মেরি। দোকান থেকে সে খাবার তুলে খেতে শুরু করে। এরপরেই মাহুত, তাকে হুক জাতীয় কোনও লোহার দণ্ড দিয়ে আঘাত করতে থাকে।

এর পরেই মেরি ক্ষুব্ধ হয়ে শুঁড় বাগিয়ে মাহুতকে আছড়ে পেলে মাটিতে। পা দিয়ে রগড়াতে থাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাহুতের। বিষয়টি প্রকাশ্য রাস্তায় হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লেখালেখি শুরু হয় সংবাদপত্রে। সার্কাসের হাতি উন্মাদ হয়ে গিয়েছে, যে কোনও দিন সার্কাসের মধ্যেও দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। জনতার তরফেও দাবি উঠতে থাকে, সার্কাস থেকে মেরিকে বাতিল করতে হবে।

বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনা হয়, ঘটনার গুরুত্ব বুঝে জুরিরাও সিদ্ধান্ত নেয়, মেরিকে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে। মাহুতকেই যখন সে মেরে ফেলেছে, তখন যে কোনও সময় সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতি হতে পারে। তবে এতো বড় পশুকে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে মারা সম্ভব নয়। তাই রেল স্টেশনের কাছেই পুরো বন্দবস্তো করা হয়। দেওয়া হয় প্রকাশ্যে ফাঁসি।

https://www.youtube.com/watch?v=sipVkyWePY0&t=272s
Subscribe our youtube channel Travel Tv Bangla

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

বালির আয়ুং নদীর রক স্কাল্পচার: এক ঐতিহ্যের গল্প

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং প্রাচীন ইতিহাসের এক অপূর্ব মিশ্রণ। এই দ্বীপের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!