Breaking News

রাজস্থানের অফবিট গন্তব্য: হনুমানগড়, এক অজানা ইতিহাসের গড়ে

রাজস্থানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত হনুমানগড় জেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অনন্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। শুষ্ক মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত এই স্থানটি পর্যটকদের জন্য তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত হলেও, এর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, ঐতিহাসিক কেল্লা এবং ধর্মীয় কেন্দ্রগুলি সত্যিই দেখার মতো।

হনুমানগড়ের ইতিহাস

হনুমানগড়ের প্রাচীন নাম ছিল ভাটনগর। এটি ইন্দো-গঙ্গা উপত্যকা সভ্যতার অন্তর্গত ছিল এবং প্রাচীনকাল থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে খননের সময় বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা হরপ্পা সভ্যতার সাথে এর সংযোগকে প্রমাণ করে।

দর্শনীয় স্থানসমূহ

১. ভটনার দুর্গ (Bhattner Fort): রাজস্থানের অন্যতম প্রাচীন কেল্লাগুলির মধ্যে ভটনার দুর্গ একটি। এটি একসময় রাজস্থানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এর প্রাচীর ও স্থাপত্য আজও তার অতীত গৌরবের কথা স্মরণ করায়।

২. কালীবঙ্গন (Kalibangan): হনুমানগড় থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানটি হরপ্পা সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র। এখানে পোড়ামাটির বাসনপত্র, নির্মাণকৌশল এবং নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

৩. গোগামেড়ি মেলা (Gogamedi Fair): এটি একটি জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব, যা প্রতি বছর আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয়। গোগাদেব, যিনি লোকদেবতা হিসেবে পূজিত হন, তার স্মরণে এই মেলা আয়োজিত হয়।

৪. শ্রীগঙ্গানগর সন্নিকটবর্তী এলাকা: হনুমানগড়ের কাছাকাছি অবস্থিত শ্রীগঙ্গানগর তার সেচ প্রকল্প এবং সবুজ পরিবেশের জন্য পরিচিত। এখানকার গ্রামীণ সৌন্দর্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।

৫. গোগামারী মন্দির: গোগাদেবের প্রতি উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরটি রাজস্থানের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ধর্মীয় দর্শনার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কলকাতা থেকে হনুমানগড় যাওয়ার উপায়

কলকাতা থেকে হনুমানগড় পৌঁছানোর জন্য প্রধানত তিনটি উপায় আছে:

১. রেলপথে: কলকাতা থেকে হনুমানগড় সরাসরি ট্রেন পরিষেবা উপলব্ধ। “হাওড়া-বিকানের এক্সপ্রেস” বা অন্য কোনো ট্রেন ধরে সহজেই হনুমানগড় পৌঁছানো যায়। যাত্রার সময় প্রায় ২৪-৩০ ঘণ্টা।

২. সড়কপথে: কলকাতা থেকে হনুমানগড় সড়কপথে যাওয়া একটু দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর। এটি ১,৭০০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং সময় লাগবে প্রায় ৩০-৩৫ ঘণ্টা। তবে যারা দীর্ঘ ড্রাইভ পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প।

৩. বিমানপথে: কলকাতা থেকে জয়পুর বা দিল্লি পর্যন্ত বিমান যাত্রা করুন। তারপর সেখান থেকে ট্রেন বা সড়কপথে হনুমানগড় পৌঁছানো সম্ভব। জয়পুর বা দিল্লি থেকে হনুমানগড়ের দূরত্ব যথাক্রমে প্রায় ৪০০ এবং ৩৯০ কিলোমিটার।

থাকার ব্যবস্থা এবং স্থানীয় খাবার

হনুমানগড়ে থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল, লজ এবং ধর্মশালা রয়েছে। এখানে রাজস্থানি খাবারের পাশাপাশি উত্তর ভারতের ঐতিহ্যবাহী পদ পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবারের মধ্যে দাল-बाटি-চুরমা এবং গত্তা কারি অবশ্যই চেষ্টা করে দেখবেন।

উপসংহার

হনুমানগড় একটি অফবিট গন্তব্য হলেও, এটি ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এক অমূল্য ভান্ডার। যারা ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে রাজস্থানের নিভৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য হনুমানগড় আদর্শ। ইতিহাস, ধর্ম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই অনন্য সংমিশ্রণ আপনাকে নিশ্চিতভাবে মুগ্ধ করবে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!