Breaking News
Himalayas Ranikhet India Nature Valley Mountains

চটপট ঝালিয়ে নিন কুমায়ুন সফরের বিস্তারিত সফর পরিকল্পনা দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম পর্ব এই লিঙ্কে

বিনসর- নৈনিতাল থেকে আলমোড়া হয়ে বিনসর যাওয়ার পথটিও অসাধারণ। আলমোড়া থেকে ২০ কিমি দূরে অবস্থিত কাপড়খান গিয়ে পথ দুভাগ হয়েছে। উত্তরমুখী পথ গিয়েছে বাগেশ্বর আর ডানদিকের পথ উঠে গিয়েছে বিনসর অভয়ারণ্যের দিকে। কিছুদূর গেলেই ফরেস্ট চেকপোস্ট। এপথে গাড়ি চলাচল, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত বন্ধ থাকে। ঘন জঙ্গলের মদ্যে দিয়ে এগিয়ে চলার অভিজ্ঞতা যে বেশ রোমাঞ্চকর তা বলার অপেক্ষ রাখে না।

কারণ এই অরণ্যের উল্লেখযোগ্য প্রাণীরা হল চিতাবাঘ, হিমালয়ের কালো ভল্লুক, বুনো শুয়োর, বার্কিং ডিয়ার, বাঁদর, হনুমান এবং জঙ্গলি বিড়াল। এপথে দেখে নেওয়া যায়, বিনেশ্বর শিবমন্দির। ন্যপ্রাণী অধ্যুষিত গভীর জঙ্গলে ঘেরা, পাহাড়ের উপর পর্যটক আবাস। পর্যটক আবাসের ছাদে বিনসরের সূর্যোদয় দেখার সেরা ভিউপয়েন্ট।

একটা কথা মনে রাখবেন বিনসরের সরকারি পর্যটক আবাসে থাকতে না পারলে বারো আনা মজা মাটি। কারণ অন্যান্য সব হোটেল জঙ্গলের বাইরে। মনে রাখবেন বিনসরের পর্যটক আবাসে বিদ্যুত্ নেই। জেনারেটর সহযোগে আলো জ্বলে, সন্ধে ছটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত। অরণ্যের মধ্যে হওয়ায়, পর্যটক আবাসে আমিষ খাবার পরিবেশিত হয় না।

কৌশানিকুমায়ুনের আরও এক নির্জন জনপদ কৌশানি, নৈনিতাল থেকে দূরত্ব ১১৮ কিমি। এবং চৌকরী থেকে ৯০ কিমি। লোকশ্রুতি অনুসারে এখানে তপস্যা করেছিলেন কৌশাম্বি ঋষি। তার নাম থেকে এই শৈলপুরীর নামকরণ হয়েছে। উচ্চতা ১৮৯০ মিটার। পাইন, ওক, ফারের প্রাধান্য। উত্তর দিগন্তে তুষার ধবল নন্দাদেবী, ত্রিশূল, পঞ্চচুল্লী, নন্দাকোট। দিনের নানা সময়ে এই সব শৃঙ্গে রং বদলের খেলা চলে।

মায়াবী দৃশ্যে কোলাজ দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে সময় চলে যাবে তা টের পাবেন না। ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের দৃশ্য মন ভরাবে। ১৯২৯ সালে মহাত্মা গান্ধী এখানে বেশ কিছুদিন কাটান এবং অনাসক্তি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রম চত্বরে তাঁর মূর্তি রয়েছে। মিউজিয়ামে গান্ধীরজির ব্যবহৃত চরকা, বইপত্র ও অজস্র ছবির প্রদর্শনী দেখে নিতে পারেন।

বাজারের কাছে প্রখ্যাত হিন্দি কবি, সুমিত্রা নন্দন পন্থের জন্ম ভিটে ও মিউজিয়ামটিও দেখে নিতে ভুলবেন না। শহর থেকে নয় কিমি দূরে রুদ্রধারী শিবমন্দির। গাড়ি থেকে নেমে পাইন ও দেবদারুর ছায়ায় ২ কিমি পথ হেঁটে গুহামন্দিরে ঢুকতে হয়। জনশ্রুতি, এখানে ছিল কৌশাম্বি মুনির তপস্যা ক্ষেত্র।

কৌশানিতে একসময় অনেক চা বাগান ছিল, ৩কিমি দূরে পিঙ্গলকোট, ৫কিমি দূরে পিনাট এবং আরও ১ কিমি দূরে বুদাপিনাট চা বাগান দেখে নিতে পারেন। মার্চের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চা বাগান খোলা থাকে। এছাড়া দেখুন লক্ষ্মী আশ্রম ও কস্তুরবা গান্ধী মিউজিয়াম। গান্ধীদির প্রিয় শিষ্য সরলাবেন এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রীর প্রদর্শনী চলে। কেনাকাটা করে নিতে পারেন।

বৈজনাথ কৌশানি থেকে ১৯ কিমি দূরে কুমায়ুনের আর এক তীর্থক্ষেত্র বৈজনাথ। ১২৩৪ মিটার উচ্চতায় এ অঞ্চলটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে নদী। সুন্দর মন্দির কম্প্লেক্সটি গোমতী নদীর পাড়ে। মন্দিরের প্রেক্ষাপটে হিমালয়ের তুষারশুভ্রশিখর। দ্বাদশ শতকে কাত্যুরি রাজাদের আমলে এখানে গড়ে ওঠে শিব, গণেশ, পার্বতী, চণ্ডিকা, কুবের, সূর্য এবং ব্রহ্মার মন্দির। এখান থেকে আট কিমি দূরে পাহাড়ের গা ঘেঁষা গ্রাম্য পরিবেশে কোকটি মাইয়ের কালীমন্দির দেখে নিতে পারেন। কৌশানি থেকে এক ঘণ্টা অন্তর বাস ছাড়ে বৈজনাথের জন্য । সকালে বাসে বৈজনাথে এসে বিকেলে কৌশানি ফিরে যেতে পারেন।

বাগেশ্বর সরযু ও গোমতী নদীর মিলনস্থলে এক সুন্দর পাহাড়ি তীর্থক্ষেত্র বাগেশ্বর। বৈজনাথ থেকে গডুর হয়ে ২৯ কিমি দূরে বাগেশ্বর। চৌকরী থেকে দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিমি। নদীর দুপাড় জুড়ে প্রাচীন শহর। দুপাড়কে জুড়ে এক বিশাল সেতু। শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য বিশালাকার বাগনাথ মন্দির। বাগনাথ মহাদেবের নামে বাগেশ্বর নাম। ১৬০২ সালে চাঁদ বংশের রাজা লক্ষ্মীচাঁদ এই মন্দিরের সংস্কার করেন। মন্দিরের গর্ভগৃহে বাগনাথ মহাদেবের লিঙ্গের অবস্থান।

মন্দিরের বাইরে প্রস্তর নির্মিত নন্দীর মূর্তি ছাড়াও দেখুন ভৈরব, দত্তাত্রেয়, গঙ্গা, হনুমান, দুর্গা, কালিকা, চণ্ডিকা ও বানেশ্বর মন্দির। মন্দিরগুলি তৈরি হয়েছিল সপ্তম থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে। বাগেশ্বর থেকে ১২ কিমি দূরে ছোট্ট টিলার উপর দেবী চণ্ডিকার মন্দির। মন্দিরের গর্ভে সিংবাহিনী। চতুর্ভূজা শ্বেতপাথরের দেবীমূর্তিটি অনবদ্য। এখান থেকে পাখির চোখে দুই নদীর সঙ্গমস্থলে বাগেশ্বরকে অসাধারণ লাগে।

পিথোরাগড় জেলায় ২০১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চৌকরীকে বলা হয়, কুমায়ুন হিমালয় মাউন্টেন গ্যালারি। কাঠগোদাম থেকে চৌকরীর দূরত্ব প্রায় ১৯৮ কিমি। নৈনিতাল থেকে ১৭৩ কিমি। এবং বেগাশ্বর থেকে ৪৫ কিমি। পাইন আর দেবদারুতে ঘেরা আঁকা বাঁকা পিচ রাস্তার শেষে নিরালা পাহাড়ি গ্রাম।

এখানকার ভিউ পয়েন্টে এলে মেঘমুক্ত আকাশের ক্যানভাস জুড়ে দেখতে পাবেন। নন্দাদেবী, চৌখাম্বা, ত্রিশূল, পঞ্চচুল্লি এবং আরও অনেক শৃঙ্গ। তবে দিনের চেয়ে রাতের চৌকরীা বেশি সুন্দরী। রাতে এখান থেকে দূরে ভেরিনাগের আলোর মালা তাক লাগিয়ে দেয়।

পরের দিন ভোরেই রওনা দিন কোটমানিয়া, প্রায় ৩ কিমি চড়াই পথ। ২২৭৫ মিটার উচ্চতায় মাস্ক ডিয়ার রিসার্চ সেন্টারে, এখানে কস্তুরি মৃগের দেখা পাবেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রিসার্চ সেন্টার খোলা থাকে। ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন, গান্ধীদির শিষ্যা সরলাবেনের আশ্রম। এক সময় চৌকরীতে অনেক চা বাগান থাকলেও, এখন তার কিছুই নেই। তবে ১০ কিমি দূরে ভেরিনাগে এখনও কিছু চা বাগান রয়েছে, দেখতে পারেন।

পরের পর্বে থাকছে পাতালভুবনেশ্বর, বিরথি ফলস,
মুন্সিয়ারি, রানিক্ষেত, করবেট ন্যাশনাল পার্ক।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!