Breaking News

এই বাড়িতে রাখা আছে, কালো অধ্যায়ের স্মৃতি ‘দাহ হওয়া সতীর সিঁদুর’ কিন্তু কেন?

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ঘাটের কাছে মাঝিদের নৌকা ভেড়ানো বারণ হয়ে গিয়েছে। মণ্ডলবাড়ির এক কর্তা মারা গিয়েছেন। শ্মশানঘাটে তাঁর চিতা সাজানো হয়েছে। উলু আর শঙ্খ ধ্বনি বেজে উঠছে মুহুর্মুহু। বছর তিরিশের এক সদ্য বিধবাকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন কিছু মহিলা। উদভ্রান্ত চেহারা, চোখ, মুখ পাথরের মতো স্থির, এলোমেলো চুল।

অবিরত কান্নার ফলে অশ্রুধারা শুকিয়ে গিয়েছে। তাঁর শরীরে লেপে দেওয়া হচ্ছে সিঁদুর। মাথার চুল, মুখ, গোটা শরীর লাল হয়ে উঠেছে। তাঁর আলগা হাতে পরানো হচ্ছে শাঁখা। একের পর এক মহিলা তাঁর হাতে জোর করে পরাচ্ছেন। আর সদ্য বিধবার অভিব্যক্তি শান্ত। ঠিক যেভাবে বিজয়ার সময় দুর্গাকে বরণ করা হয়। অনেকটা সেই রকম, সতীকে বরণ করা হচ্ছে।

স্বামীর চিতায় বসানো হয় সতীকে। চিতায় ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। জ্যান্ত শরীর পুড়তে থাকে। আগুনের রোষ যত বাড়তে থাকে, ততই আর্ত চিকত্কারে উত্তাল হয়ে ওঠে গঙ্গার ঘাটে। আর সেই শব্দকে চাপিয়ে বোল শুরু হয় ঢাকের। পার্শ্ব সঙ্গীতের জন্ম নেয় উলু ধ্বনি আর শঙ্খের।

সতীকে দেখতে চারপাশের গ্রাম থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমাতো গঙ্গার ঘাটে। একদল লাঠিয়াল আর ডোম, মাঝে মধ্যে বাঁশ দিয়ে মৃতদেহকে আঘাত করতো, ছুঁড়ে দেওয়া হত নতুন কাঠ। একটা সময়ে গোঙ্গানি, আর্ত চিত্কার সব কিছু মিলে মিশে যেত কালো ধোঁয়ায়।

অবশেষে পড়ে রইত, কিছু পোড়া কাছ, অবশিষ্ঠ হাড় আর ভাঙা শাঁখার টুকরো। আর সেই শাঁখা সংগ্রহ করতে পড়ে যেত হুড়োহুড়ি। এ পবিত্র শাঁখা, সংগ্রহ করা হত, মাটিতে পড়ে থাকা সতীর শরীরে মাখানো সিঁদুর।

একটা সময় বাংলার বুকে সতীদাহ নামে এক কুত্সিত প্রথার চল ছিল। রাজা রামমোহন রায় ও বেন্টিঙ্ক সাহেবের বদান্যতায়, আইন করে সেই প্রথার নির্মূল হয়েছে। কিন্তু সেই প্রথার স্মৃতি এখনও কিছু বাড়ির লক্ষ্মীর ঘরে লালিত পালিত হয় আড়ালে আবডালে। আধুনিক জনমানসের লোকচক্ষুর আড়ালে।

কলকাতার কাছেই এমন এক রাজবাড়ি রয়েছে, যা আজ ট্যুরিজিমের অন্তর্ভুক্ত মণ্ডলদের বাওয়ালি রাজবাড়ি। অনেকেই এই বাড়িতে বেড়াতে যান, কেউ ডে ট্রিপে, কেউবা একটা রাত কাটাতে। সেই পুরনো জমিদারি অভিজাত্যের উষ্ণতা পেতে। জমিদার বাড়ির সেই রাজকীয় খাবার, দামও তেমন। কিন্তু বহু বাঙালির কাছেই যেটা ধরা পড়ে, সেটা হল একটা আধো আলোছায়া ইতিহাস।

আর আমরা তুলে ধরতে চাইছি, রাজবাড়ির লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ইতিহাস। যা বহু বাঙালির কাছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। একদম উপরে যে ঘটনার কথা বলেছি, সেটি হয়েছিল ১২২৩ বঙ্গাব্দে ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণ একাদশীর দিন। টালিগঞ্জের দ্বাদশ মন্দিরের মাঝখানে সাজানো চিতায় রাখা হয়েছিল মানিক মণ্ডলের দেহ। সেখানেই সহমৃতা হন তাঁর স্ত্রী মুক্তকেশী।

বাওয়ালির মণ্ডরা হলেন মাহিষ্য। যতদূর জানা যায়, এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাসুদেব রাম। তিনি সেই সময় নবীব সরকারের সৈনিক পদে ছিলেন। তথনই বিশাল সম্পত্তি অর্জন করেন। তাঁর পুত্র রাধাশ্যাম। রাধাশ্যামের পুত্র শোভারাম, হিজলির রাজসরকারের অধীনে পাটোয়ারির কাজ করতেন।

তারপরেই বজবজের চণ্ডীপুর গ্রামে মণ্ডল পদ পেয়েছিলেন। শোভারামের ছেলে মেঘনাদ। মেঘনাদের ছেলে রাজারাম। এরা দুজনেই নবাব সরকারের কর্মচারী ছিলেন। রাজারাম ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিধর। মুঘল সম্রাট শাজাহান বা ঔরঙ্গজেবের আমলে একবার বিদ্রোহ দমনে সাহায্য করেছিলেন। বিদ্রোহ দমনে যেহেতু তিনি নেতৃত্বে ছিলেন, তাই তার সুফলও পেয়েছিলেন। মুঘল দরবার থেকে পেয়েছিলেন সনদ। প্রায় ১৫টি মোজার মণ্ডল হয়ে যান।

রাজারাম মণ্ডল থেকে হরানন্দ মণ্ডল পর্যন্ত প্রায় ১৫০ বছর এরা দিল্লির দরবারের রাজকর্মীচারী ছিলেন। এই বংশের প্রথম জমিদার হন হরানন্দ মণ্ডল। তাঁর ছোট ছেলে মানিক মণ্ডলের সময় থেকে সমৃদ্ধি আরও বাড়ে। এই মণ্ডলবাড়ির সঙ্গেই বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল রানি রাসমনির।

এই বাড়িকে ঘিরে আরও একটি মজাদার তথ্য রয়েছে। এই বাড়ির এক উত্তরপুরুষের কোমরে ছিল ধানের মাপের এক সোনার মাদুলি। আর সেই মাদুলির মধ্যেই রয়েছে লক্ষ ব্রাহ্মণের পদধূলি। কোনও এক সময় বাওয়ালি রাজবাড়িতে লক্ষ ব্রাহ্মণের সমাগম হয়েছিল। সেই সময়ই সেই পদধুলিকণা সংগ্রহ করে রেখে মাদুলি বানান তাঁরা। এই একই ধরণের মাদুলির বিকল্প বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোনও স্যাঁকরা সফল হননি।

এই প্রতিবেদন পড়ে আপনার কেমন লাগল? ভালো লাগলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ সফরের সুলুকসন্ধান লিখে জানান

সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল TRAVEL TV BANGLA
আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

হাওড়ার শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, এক স্বর্ণময় অধ্যায়, বর্তমানে স্বপ্নের অতীত

অর্বিট ডেস্ক– হাওড়া শহরে একটা সময়ে দুরন্ত বেগে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার পর …

One comment

  1. This Rajbari should be demolished and set on fire immediately to root out the superstition minded building !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!