Breaking News

রাশিয়া বেড়াতে চান? ঝালিয়ে নিন কয়েকটা দিনের সফর প্ল্যান ও প্রস্তুতি

রাশিয়া- মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ, মুরমানস্ক।

অর্বিট ডেস্কপ্রস্তুতি-যাত্রার আগে যে প্রস্তুতিগুলি প্রয়োজন সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করে নিই। সবার আগে যেটা দরকার তা হল কংক্রিট ট্যুর প্ল্যান। আর এই প্ল্যানের উপরেই নির্ভর করছে বাকি কাজগুলি। সবার আগে যেটি প্রয়োজন ভিসা ইনভিটেশন। এই ভিসা ইনভিটেশন থাকলেই তবে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ভিসা ইনভিটেশন মূলত দিয়ে থাকে রাশিয়ার রেজিস্টার্ড কিছু ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল বা সংস্থা। আপনি যেহেতু ট্যুরে যাবেন তাই ট্রাভেল এজেন্সি মারফৎ ভিসা ইনভিটেশন নিতে হবে।

কিছু ভিসা ইনভিটেশন এজেন্সির ওয়েবলিঙ্ক। (যে কোনও সাইটের মাধ্যমে ভিসা ইনভিটেশনের আবেদন করবেন না কারণ প্রচুর জালিয়াতি হয়)

এরপর থাকছে ভিসার আবেদন। মনে রাখবেন আরপার কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত ট্রাভেল ডকুমেন্ট থাকলেও ইনভিটেশন লেটার ছাড়া ভিসা পাবেন না।

ভিসা আপনি পাবেন একদম নির্দিষ্ট তারিখের, ধরা যাক আপনি ১ মে রাশিয়া প্রবেশ করবেন আর ওখান থেকে বেরোবেন ১০ মে। আপনি ভিসা পাবেন ওই নির্দিষ্ট দিনের তার এক দিনের বেশিও নয়, কমও নয়। এবং এই ডেট আপনার ভিসা ইনভিটেশনেও উল্লেখ থাকে যেন।

আপনার ট্যুরের দিন হিসেবে আপনার ব্যাঙ্কের সাফিসিয়েন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স যেন থাকে। যেগুলি আপনার সঙ্গে থাকতেই হবে। ১। রিটার্ন এয়ার টিকিট ২। ভিসা ইনভিটেশন ৩। ভিসা । ৪ পর্যাপ্ত মার্কিন ডলার (৪০০-৫০০ ক্যাশ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড (যাতে সাফিসিয়েন্ট ফান্ড থাকে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কম করে জনপ্রতি, দিন বেশি হলে আরও বেশি রাখতে হবে) ৪। কনফার্মড হোটেল বুকিং। এগুলির প্রয়োজন কারণ একটিও অমিল হলে বা সন্দেহজনক মনে হলে আপনাকে রাশিয়ার য়ে কোনও এয়ারপোর্ট থেকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে।

রাশিয়া আপনার প্রথম গন্তব্য শহরে পৌঁছে সবার আগে যেটি করাবেন সেটি রেজিস্ট্রেশন, এবং তা দিন তিনেকের মধ্যে। একটি কার্ড দেবে সেটি ভুল করেও হারাবেন না। কারণ রাশিয়াতে যে কোনও সময় রাস্তার মাঝে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, রিজিস্ট্রেশন কার্ড চেক হতে পারে, সেটি দেখাতে হবে। তবে রাস্তায় কোনও পুলিশ দেখতে চাইলে তাকে বলবেন থানায় নিয়ে চলুন সেখানে দেখাবো, কারণ রাস্তায় ফেক পুলিশ, স্ক্যামার ঘুরে বেড়ায়।

মস্কো-

এই শহরে কী দেখবেন, কোথায় থাকার চেষ্টা করবেন এবং কোন পরিবহণ ব্যবহার করবেন ?

মস্কো শহরে রেড স্ক্যোয়ারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। এখানেই পাবেন আপনি একাধিক দেখার বিষয়বস্তু। মেট্রোও কাছাকাছি তাই মেট্রো ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় দ্রুত পৌঁছতে পারবেন। আশে পাশে দেখার মতো জায়গাগুলি হল, মস্কো ক্রেমলিন, রেড স্ক্যোয়ার, সেন্ট বেসিল ক্যাথিড্রাল, বলশাই থিয়েটার, লেনিন মুসোলিয়াম, গুম, গোর্কি পার্ক, দ্যা স্টেট ত্রেত্যাকোভ গ্যালারি, আর্মোরি চেম্বার, গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেস, পুস্কিন স্টেট মিউজিয়াম, ক্যাথিড্রাল ক্রাইস্ট দ্যা সেভিয়ার, মিউজিয়াম অফ কস্মোনটিক্স (মহাকাশ গবেষণা সম্পর্কিত), ম্যাক্সিম গোর্কির বাড়ি, নিকোলাই গোগোলের বাড়ি, স্কুসেভ স্টেট মিউজিয়াম অফ আর্কিটেকচার, রেবুসিনস্কি মিউজিয়াম অফ আইকন অ্যান্ড পেনটিংস।

এগুলি ছাড়াও অবশ্যই পারলে দেখুন বাঙ্কার ৪২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মস্কোর মেট্রের একটি অংশ কেটে কোল্ড ওয়ারের সময় এই বাঙ্কার বানানো হয়। যা এক সময়ের ইউ এস এস আরের ইতিহাসের অনন্য নজির। কী ভাবে যাবেন ? মস্কো সিটি সেন্টারের কাছ থেকে মেট্রো ধরুন। স্টেশন হবে KURSKAYA । সার্কেল লাইন 5 ধরুন ওখান থেকে TAGANSKAYA যাওয়ার মেট্রো পাবেন, মনে রাখবেন মস্কোর মেট্রোতে বেশ কিছু স্টেশন আছে, যা কানেক্টিং রুটের আর সেই রুটগুলি ধরতে গেলে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়, নামতে হয়, এস্কালেটরও আছে। TAGANSKAYA তে নেমে ওখানে গিয়ে বাঙ্কার ৪২ বললেই দেখিয়ে দেবে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ।

মস্কো শহরে অবশ্যই ঘুরে দেখবেন আর্বাট স্ট্রিট এখানে সস্তায় ভিন্ন পদের খাবার পাবেন, রাশিয়ান, জর্জিয়ান, উজবেকিস্তানের। প্রচুর স্যুবেনিরের দোকানও আছে। মেট্রো ছাড়াও লোক বাস পাওয়া যায়, তবে চাইলে yandex taxi অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে পারেন, এটি অনেকটাই ওলা উবেরের মতো, সস্তাই পড়বে। সময় সুযোগ পেলে মস্কো বা মস্কোভা নদীর বুকে একটি ক্রুজে শহরটাকে দেখে নিতে পারেন। আর শহর দেখতে বেশি ঝুঁকি না নিতে পারলে হপ অন হফ অফ বাসে চড়ে শহরটাকে বুড়ি ছোঁয়া করতেই পারেন।

সেন্ট পিটার্সবার্গ।

মস্কো থেকে রাতের ট্রেন ধরে বেরিয়ে পড়ুন সেন্ট পিটার্সবার্গ। ১৭০৩ সালে এই বন্দর শহরের গোড়াপত্তন হয়। এক সময় এই শহরের নাম হয় লেনিনগ্রাদ, পরে আবার শহরের নাম পরিবর্তিত হয় সেন্ট পিটার্সের নামে। এখানে কী দেখবেন ?

অবশ্যই দেখবেন হেরমিট্জ মিউজিয়াম/ উইন্টার প্যালেস, রাশিয়ান মিউজিয়াম, পিটার অ্যান্ড পল ফোর্টেস, দ্যা অ্যাডমিরালটি (ভেতরে ঢোকা যাবে না, কিন্তু বাইরে থেকে অবশ্যই দেখুন), নেভা ব্রিজ, আর্টিলারি মিউজিয়াম, এথনোগ্রাফিক মিউজিয়াম, আলেক্জান্ডার নেভস্কি মনাস্ট্রি, চার্চ অফ সেভিয়র অন স্প্লিড ব্লাড, আওয়ার লেডি অফ কাজান ক্যাথিড্রাল, সেন্ট আইজাক ক্যাথিড্রাল, পিটার চার্চ অফ গ্রেট কেবিন, নার্ভা ত্রিম্ফল আর্চ, কিরভ মিউজিয়াম, এরারতা মিউজিয়াম অফ কনটেম্পোরারি আর্ট, ইভান ক্রুজেন্সথ্রেন স্ট্যাচু।

খাবার- এখানেও রাশিয়া, ছাড়া, উজবেকিস্তান, জর্জিয়ান ফুড পাওয়া যায়, রেস্তরাঁ ভেদে দামের তারতম্য আছে, এ ছাড়া বেশ কিছু ফুড চেইনও আছে, যাদের কাছে সেন্ট্রাল এশিয়ার ভিন্ন পদের খাবার পাওয়া যায়।

মুরমান্সক।

এই শহর রাশিয়ার একদম উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। এবং আর্টিক সারকেলের ও উত্তরের বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। প্রায় ৩ লক্ষ জনসংখ্যা রয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নৌ ও ব্যবসায়ীক বন্দর গড়ে তোলা হয় এখানে। এখানে তিনটি উপায়ে পৌঁছনো যায় বিমান, জলপথ ও রেলপথ। বলাই বাহুল্য একমাত্র গরমকাল ছাড়া জলপথে যাওয়া কঠিন, তবে রেলপথ ও আকাশপথে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মোটামুটি ২৭-৩০ ঘণ্টার যাত্রাপথ ট্রেনে গেলে।

এখানে কী দেখবেন ?

মুরমান্সকে মূলক পর্যটকেরা আসে অরোরা হান্টিঙের জন্য। উত্তর নৈসর্গিক আলো ম্যাজিক্যাল রূপ এক কথায় অবর্ণনীয়। নরওয়ে , আইসল্যান্ডের পাশাপাশি এখানেও সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। উত্তরের আলো দেখতে হলে আপনাকে মুরমান্সক থেকে যেতে হবে তেরিবার্কা গ্রামে, যা মূল শহর থেকে প্রায় ১৩০ কিমি দূরে। তেরিবার্কা যেতে রাশিয়া সরকার পরিচালিত নির্দিষ্ট সময়ের বাস আছে আবার ট্যাক্সিও রয়েছে। এখানে বেশ কিছু এজেন্সিও রয়েছে, যাঁরা এই ট্যুর করিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, ডিসেম্বর মাসে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা নামে মাইনাস ১০-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, কখনও কখনও সেটি আরও ১০ ডিগ্রি মাইনাসে দৌড়য়।

ভিসা করাতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন ভিসা ইনভিটেশন, তার কিছু সাজেশন লিঙ্ক দেওয়া হল, অনলাইনে ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারেন। তবে যে কোনও সাইটে গিয়ে অনলাইন টাকার লেনদেন করবেন না, রাশিয়ায় স্ক্যামার অনেক রয়েছে।

আর নিজে অনলাইনে করার সাহস না পেলে কোনও বিশ্বস্ত এজেন্সির সাহায্য নিতে পারেন।

http://comradehostel.com এই সাইটে service অপশনে গিয়ে visa support

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

অযোধ্যার রাম মন্দির: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও এক মহামন্দিরের পুনর্জন্ম

অযোধ্যা, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর অন্যতম পবিত্র স্থান, ভগবান শ্রীরামের জন্মভূমি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে নির্মিত শ্রীরাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!