স্বাতী চ্যাটার্জি– আজব দেশ ভারত, অদ্ভুত কিছু কাহিনি। ভক্তিমার্গের দর্শনে প্রাচীন ভারতের জুড়ি মেলা ভার। ভারতীয় পুরাণগাথা পড়লে জানা যায়, এ বিশ্ব একটাই পরিবার, যেখানে মনুষ্য ছাড়াও রয়েছে উদ্ভিদ ও নানা জীব জগত।
একমাত্র ভারতীয় পুরাণেই মেলে দেবতাদের বাহনেরা জীবজন্তু। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রে একটি রাশি হল মকর। এই মকর হলেন মা গঙ্গা ও বরুণের বাহন। এই প্রাণীর বর্ণনা কিছুটা আলাদা হলেও, কুমীরের সঙ্গে অনেকটাই মেলে। তাই কুমীরকে মকর হিসেবেই ধরা হয়।
কুমীর যে জলজ একটি হিংস্র মাংসাশী প্রাণী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একে পোষ মানানও যথেষ্ট জটিল কাজ। কিন্তু হাজার বছর ধরে পরম্পরা মেনে একটি মন্দিরকে রক্ষা করে আসছেন এই মকরদেব ওরফে কুমীর। দৈনিক তার আহারে থাকে নিরামিষ পদ।
ভারতের কেরালার কাসারাগোড় জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে রয়েছে হাজার বছরের পুরনো একটি বিষ্ণুমন্দির। প্রায় আড়াই একর জায়গা জুড়ে রয়েছে জলাশয়, সেখানেই এই মন্দিরটি। ভগবান বিষ্ণুকে এখানে অনন্তপদ্মনাভস্বামী রূপে পুজো করা হয়। জলাশয়ের পাশেই রয়েছে কিছু গুহা।
গুহাগুলিকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানা লোক কাহিনি। মন্দির চত্বরে রয়েছে, বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। কালের নিয়মে সেগুলি নষ্ট হলেও, রয়ে গিয়েছে একটি। তবে এই মন্দিরটির বিশষত্ব রয়েছে অন্য জায়গায়।

জলাশয়েই রয়েছে একটি দৈত্যাকৃতির কুমীর। নাম বাবিয়া। এর অর্থ হল, অভিভাবক। জলেশয়ের মধ্যে থাকা মাছ, বা স্নান করতে নামা কোনও পুণ্যার্থী, পুরোহিতের ক্ষতি করেনি কোনওদিন।
সবচেয়ে অবাক করা কাণ্ড হল, এই কুমীর সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী। স্থানীয় লোক ইতিহাস বলছে, হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল মন্দির, সেই থেকে এই মন্দিরের রক্ষাকর্তা হিসেবে রয়ে গিয়েছে একের পর এক কুমীর। ১৯৪৫ সালে এক ইংরেজ সেনাকর্মী, একটি কুমীরকে গুলি করে মেরেছিল। তার পরের দিনই সেই সৈনিকের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়।

জলাশয়ে কুমীর আসা নিয়েও রয়েছে কিংবদন্তী, একটি কুমীর বয়স হলে বা মৃত্যু হলে, তার জায়গায় অন্য একটি কুমীর নিজে থেকেই চলে আসে। ইংরেজরা যে কুমীরটিকে হত্যা করেছিল, তারপর সেই জায়গা নেয় এই বাবিয়া।
এখনও পর্যন্ত সেই এই মন্দিরের অভিভাবক। প্রচলিত বিশ্বাস, মন্দিরে পুজো দিতে গেলে বাবিয়ার দেখা পাওয়া মানে, শুভ ইঙ্গিত। মন্দিরের পুজোর প্রসাদ তার প্রধান খাদ্য। প্রতিদিন দুপুরে নির্দিষ্ট সময়ে সে জলের উপরে উঠে আসে। মন্দিরের পুরোহিত তাঁকে চালের গুঁড়ো এবং গুড় দেন। সেই প্রসাদেই মকরদেব শান্ত হয়ে নিজের বাসস্থানে চলে যান।