Breaking News

নৃসিংহপুরের রাজবাড়ি কেন অভিশপ্ত? কী এমন ভয়ঙ্কর অঘটন ঘটে?

স্বাতী চ্যাটার্জি- আজকের ঘটনা আন্দুল রাজবাড়িকে ঘিরে নয়। আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস যদি জানতে চান, তাহলে আমাদের অন্য ভিডিও রয়েছে, সেটি দেখতে পারেন। আজকের পর্ব এমন এক পরিত্যক্ত রাজবাড়িকে ঘিরে তা আপনাদের অনেকেরই জানা। কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে সেই রাজবাড়ির কিছু অলৌকিক কাহিনি পেশ করা হচ্ছে। তাহলে শুনতে থাকুন, নৃসিংহপুরের অভিশপ্ত রাজবাড়ি।

অর্পিতা

সে দিন যে ঘটনা ঘটেছিল, তা আমি কোনও দিন ভুলতে পারবো বলে মনে হয় না। আমার জীবনে এখনও সবচেয়ে বড় আতঙ্কের সন্ধে কেটেছিল ওই রাজবাড়িতে।

অসিত

এখনও সেদিনের কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। সেদিন আমার জীবনে ঠিক কী ঘটেছিল, তা মনে পড়লেই সারা শরীর অবশ হয়ে ওঠে। আমি যে এখনও বেঁচে আছি, এটাই ঈশ্বরের কৃপা।

অনিন্দিতা

কিছু ঘটনা থাকে, যা কোনওদিন কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। কোনও দিনও না। আমার সঙ্গে ঠিক সেটাই ঘটেছিল। কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুন, আমি জানি, জায়গাটা ভৌতিক, অভিশপ্ত। …

কিছু মানুষের মতো কিছু অট্টালিকা, বাড়িও তার শয়তানি প্রবৃত্তিকে লুকিয়ে রাখে। অনুকুল পরিবেশে তারা নিজেদের আসল রূপ ধারণ করে। হয়তো বংশ পরম্পরায় থাকা কিছু মালিকের আত্মা মিলে মিশে যায়, অন্দরমহলে। তেমনই এক রাজবাড়ি, ডিহিভুরসুট পরগনার নৃসিংহপুরের রাজবাড়ি।

প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত এক রাজবাড়ি। রাজতোরণটার সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায়, একটা সময় এই অট্টালিকার জৌলুস ছিল বেশ জমজমাট। বাংলার শেষ নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর ইংরেজদের বদান্যতায় বাংলার বুকে বেশ কয়েকটি নতুন জমিদারের আবির্ভাব হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ, দিল্লির মুঘল সম্রাটের তরফে রাজা উপাধিও হাসিল করে নেন। নৃসিংহপুরের রাজবাড়ি তাদের মধ্যে অন্যতম।

সিরাজদৌলা যখন বাংলার মসনদে, সেই সময় জগতশেঠের অন্যতম হিসাবরক্ষক ছিলেন, আদিত্যরায়। পাশীর যুদ্ধের পর, সিরাজের একাংশ সমর্থক গুপ্ত হত্যার পথ নেয়। সেই গুপ্তহত্যায় মারা যান আদিত্যরায়। তখন তাঁর স্ত্রী ননীবালাদেবী ক্লাইভের সহায়তায় তিনপুত্রকে নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। এর কয়েক বছর পরেই, ডিহিভরসুটে জমিদারি সত্ত্ব নিয়ে পাকাপাকি ভাবে রাজবাড়ি তৈরি করে, থাকতে শুরু করেন ননীবালা। ননীবালার বড়পুত্র রতনরায়১৬ বছর বয়স হওয়ার পরেই তার অভিষেক হয়। জামিদারি সামলানোর কাজ শুরু করেন তিনি। ৩১ বছর বয়সে দিল্লি থেকে রাজা উপাধিও পেয়ে যান রতন।

কিংবদন্তি রয়েছে, বাদশার তরফে রাজা উপাধি পাওয়ার পরেই, রতনের মানসিক পরিবর্তন আসে। তাঁর নিজের দুই সহোদরকে ষড়যন্ত্র করে খুন করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়, তাঁর মাকেও একদিন গায়েব করে দেন। ইংরেজ শাসনকালেই এখানে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়, কিন্তু বছর কুড়ি চলার পর স্বয়ং রতনকুমার পুজো বন্ধ করে দেন। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানান যায়, রাজা স্রেফ অত্যাচারী ছিলেন না। অত্যন্ত কুচরিত্র ও লম্পট ছিলেন।

রাজবাড়ির উত্তর দিকে একটি পুকুর ছিল, সেখানেই তিনি তৈরি করিয়েছিলেন গুমঘর। ওখানেই নাকি, তাঁর মা, দুই ভাই সহ বহু নারীকে মেরে কবর দেওয়া হয়েছিল। একটা সময় আসে, চূড়ান্ত লাম্পট্যের জন্য, রতনের জমিদারি চলে যায়। তার জায়গায় জমিদারির সত্ত্ব পান মেহতাব খাঁ। তিনি ছিলেন অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লার রাজা সৌত্য সেনের দেওয়ান।

মেহতাব খাঁ হুগলিতে জমিদারি পাওয়ার পরেই, রতনের কাছ থেকে নৃসিংহপুরের জমিদারি কিনে নেন। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে যাওয়া, রতন প্রসাদসম অট্টালিকা, মেহতাব খাঁকে জলের দরে দিতে বাধ্য হন। শর্ত ছিল, তিনি শেষ জীবন ওই গুম ঘরে কাটাবেন। মেহতাব খাঁ অট্টালিকা নেওয়ার মাস খানেকের মধ্যে রতন রায়, তাঁর পুত্র হরিনারায়ণ এবং স্ত্রী সুলতা দেবী আত্মহত্যা করেন।

আরও পড়ুন- আন্দুল রাজবাড়ি নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ও ভুতুড়ে গল্পকাহিনি

১৯৪২ সাল। তখন পুরো দমে চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই রাজবাড়ির এক দেওয়ান কল্যাণ মিশ্র খাজনার সমস্ত দলিল দস্তাবেজ নিয়ে আসেন প্রসাদে। তিনি পুরো রাজবাড়ি ঘুরে দেখেন, কিন্তু নজরে কাউকে দেখতে পান না। মেহতাব খাঁয়ের পুরো পরিবারসহ অট্টালিকার সমস্ত কর্মী রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ ছিলেন। অথচ, রাজবাড়ির প্রত্যেকটি আসবাব থেকে জুড়ি গাড়ি, ঘোড়া সবই ছিল। বিষয়টি আশে পাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরেই রাতের অন্ধকারে রাজবাড়ির সম্পত্তি লুঠপাঠ হতে থাকে। মেহতাব খাঁয়ের নিখোঁজকাণ্ডের মাস খানেকের মধ্যে আশেপাশের সাত গ্রামে এক অজানা রোগ দেখা দেয়, পুরো মড়ক লেগে যায়। বহু মানুষ, রোগটিকে ছোঁয়াচে মনে করে রাজবাড়ির দিঘির পাশে একটা ফাঁকা জমিতে এসে কবর দিতে শুরু করে। তার পর থেকেই এলাকাটি হয়ে ওঠে পরিত্যক্ত, নির্জন, ভৌতিক।

এতো গেল নৃসিংহপুর রাজবাড়ির একটা ছোট ইতিহাস। এবার দেখা যাক, এই রাজবাড়ির মধ্যে যাঁরা সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের জবানবন্দি।

বগুরাহাট থেকে একটি পথ চলে গিয়েছে, ময়মনসিংহপুরের দিকে আর একটি পথ বেঁকে গিয়েছে গোপালগঞ্জের দিকে। রাস্তার পাশের দাঁড়িয়ে থাকা প্রকাণ্ড রাজবাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু অভিশাপের কাহিনিকে বুকে জড়িয়ে। ১৩ জুলাই ২০০৭। মেহেরপুরের বাসিন্দা অর্পিতা আর রিতা পাশের কুলবাটি গ্রাম থেকে টিউশন পড়ে ফিরছিল। দুজনেই ছিল সাইকেলে। মেহেরপুর থেকে কুলবাটির দূরত্ব চার কিলোমিটার। মাঝে পড়ে এই রাজবাড়ি। আর রাজবাড়ির কিছু দূরেই রয়েছে ঘোড়ামাড়ার জঙ্গল।

সন্ধে সাতটা নাগাদ, দুজনের সাইকেলে আসার সময়ই আচমকা জঙ্গলের কাছে বৃষ্টি নামে। এমন সময়ই অর্পিতার সাইকেলের চেন পড়ে যায়।

অর্পিতা-বৃষ্টি টিপটিপ নামার পরেই আমার সাইকেলের চেনটা খুলে গেল। জঙ্গলের রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লাম, রিতাকে দাঁড়াতে বলে, আমি চেন তুলতে লাগলাম। একবার রিতার দিকে তাকালাম, দেখলাম ও সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার চিতকার করে ডাকলাম, ও শুনতে পেল না। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। সাইকেলের চেন তুলে, আবার চালাতে শুরু করলাম, তখন অবশ্য রিতাকে আর দেখতে পেলাম না। …

– বৃষ্টি ঝেঁপে আসার পরেই, নিরুপায় হয়ে, জঙ্গল লাগোয়া রাজবাড়িতে কিছুক্ষণ কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় অর্পিতা। রাজবাড়ির প্রকাণ্ড জলবারান্দার নীচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অর্পিতা। বেশ লম্বা জলবারান্দা। এমন সময়েই জলবারান্দার অন্যপ্রান্তে রিতাকে দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায় অর্পিতা। সে চিতকার করে ডাকে রিতাকে। কিন্তু রিতা তার দিকে না তাকিয়ে কোনও উত্তর না দিয়ে, রাজবাড়ির ভেতরে চলে যায়। পুরো বিষয়টিতে অবাক হয়ে যায় অর্পিতা।

আরও পড়ুন- জানুন কালাপানি কারাগারের অজানা কথা

অর্পিতা- আমি রিতাকে ফলো করে রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকে যাই। অধিকাংশ দরজা, জানলা লোপাট হয়ে গিয়েছে। পলেস্তরা খসে গিয়েছে। ভেতরে একটা প্রকাণ্ড হল ঘর রয়েছে, সেখানে ঢুকে রিতাকে দেখতে পেলাম না। তবে কোথা থেকে যেন, কারও একটা হাঁটার শব্দ আসছিল। ভালো করে লক্ষ্য করলাম, ঠিক ডান দিকে একটা চওড়া কাঠের সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। আচমকা আমার নাম ধরে রিতা ডেকে উঠল। বললো, ওপরে আয় তাড়াতাড়ি ,একটা জিনিস দেখবি আয়।

রিতার ডাক শুনে কাঠের সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে শুরু করে অর্পিতা। দোতলায় উঠে আরও একটা বড় হল ঘর দেখতে পায় সে। ঘরের এক কোনে রাখা একটা বড় কাঠের ড্রেসিং টেবিল, তার পাশে রাখা একটা বড় পেন্টিং। তার দেখে মনে হয়, এ ছবি কোনও কোনও রাজার হবে। ধুলোর পুরু আস্তরণ জমে গিয়েছে, ফ্রেমসুদ্ধু পেন্টিং একদিকে হেলে রয়েছে। আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় অর্পিতা। আয়নার প্রতিবিম্বে অর্পিতা দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিতা। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা প্রকাণ্ড কালো ছায়া। পুরো ঘটনায় চমকে যায় অর্পিতা, সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে তাকায় কিন্তু কাউকেউ দেখতে পায় না সে। দৌড়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে শুরু করে। কিন্তু গোল বাঁধে অন্য জায়গায়। যতবারই সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামে, সেই দোতলার হল ঘরের সামনেই এসে দাঁড়ায়। যেন আজব এক চক্রব্যুহের মধ্যে ফেঁসে গিয়েছে সে। প্রায় ২০ থেকে ২৫ বার চক্কর কাটার পরেই জ্ঞান হারায় অর্পিতা। পরের দিন সকালে তাঁকে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে। সেই দিনের কথা আজও ভুলতে পারেনি অর্পিতা। ওই জঙ্গলের রাস্তা এলেই এখনও তাঁকে অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে।

রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে একাধিক ঘটনার নজির রয়েছে। দ্বিতীয় ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল অসিতের সঙ্গে। ১৫ অগাস্ট ২০০৯। ছুটির দিন। নিজের মোটরবাইকে স্ত্রীকে নিয়ে, জাঙ্গিপাড়া বন্ধুর বাড়িতে একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান অসিত। ফিরতে কিছুটা রাত হয়েছিল। ঘোড়ামাড়া জঙ্গলের সামনে আসতেই আচমকা বৃষ্টি আসে। প্রায় তিন কিলোমিটার এগোলে তবেই কোনও দোকান ও গ্রাম পড়বে। তার আগে জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়ানোর কোনও জায়গা নেই। এই সময়ই একটি গাছে তলায় দুজনে দাঁড়ায়, সেখানেই দেখতে পায়, সামনাসামনি কোথা থেকে একটা আলো আসছে, অসিত মনে করে সামনেই কোনও বাড়ি বা কিছু আছে, সেখানে দাঁড়ানো যেতে পারে। জঙ্গলের রাস্তা ধরে কিছুটা বৃষ্টিতে ভিজে, এসে পড়ে রাজবাড়ির সামনে। সামনে প্রকাণ্ড রাজবাড়ি দেখে তারা কিছুটা অবাকই হয়। দুজনেই কতবার এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছে, অথচ এখানে এমন একটি রাজবাড়ি রয়েছে, তারা জানতই না।

অসিত– পুরো ঝোপজঙ্গল এলাকায় ঢাকা একটা রাজবাড়ি দেখে অবাকই হয়েছিলাম। বরাজবাড়ির চারপাশে যে পাঁচিল ছিল, তার অনেকটা অংশ লোপাট হয়ে গেছে। মোটরবাইকের আলোয় যতটুকু দেখা গেল, বুঝলাম বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এর থেকে ভালো জায়গা আর হয় না। একটা ছাউনি দেখে আমি মোটরবাইক রাখতে গেলাম আর স্ত্রীকে টর্চ দিয়ে বললাম, জলবারান্দার সামনে দাঁড়াতে। স্ত্রী টর্চ নিয়ে এগিয়ে গেল। আমি মোটরবাইক পাশে রেখে জলবারান্দার দিকে এগিয়ে এসে স্ত্রীর নাম ধরে ডাকতে শুরু করলাম।

অসিত তাঁর স্ত্রীর নাম ধরে ডাকতে শুরু করে, কিন্তু কোনও উত্তর মেলে না। বিশাল বড় জলবারান্দার সামনে আলোছায়ার মধ্যেই ঘোরাঘুরি শুরু করি। কিন্তু ববিতাকে দেখতে পাইনি। আচমকা একবার যেন একটা টর্চের আলোর ঝলক দেখলাম। বুঝলাম আলোর ঝলকটা এসেছিল রাজবাড়ির মূল দরজার ভেতর থেকে। তড়ি ঘড়ি অসিত ঘরের ভেতর ঢুকে খেই হারিয়ে ফেলে, চারপাশ পুরো অন্ধকার। বেশ কয়েকবার ববিতারনাম ধরে চিতকার করে সে। কিন্তু পাল্টা কোনও উত্তর আসে না। বেশ ক্ষাণিক্ষণ রাজবাড়ির হলঘরের মধ্যে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে অসিত। এমন সময় একটা ক্ষীণ শব্দ শুনতে পায়, ভালো করে শোনার পর বুঝতে পারে, গলাটা তাঁর স্ত্রীর এবং আওয়াজটা আসছে উপর থেকে। কারও সঙ্গে যেন কথা বলছে। ডান দিকে ঘোড় ঘোরাতে, একঝলক একটা আলো রেখা ফুটে ওঠে, নজরে আসে, দোতলায় যাওয়ার কাঠের সিঁড়ি। অন্ধকারের মধ্যেই দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে সে।

অসিত- উপরে উঠেই যে দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে এলো, সেটা দেখেই আমার সারা শরীর কেঁপে ওঠে। টর্চটা জ্বলছে, মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে ববিতা। সামনে একটা প্রকাণ্ড আয়না। ববিতাকে কোলে তুলে দ্রুত নীচে নিয়ে আসি, বৃষ্টির জল ধরে ওর মুখে ঝাপটা মারতে শুরু করি। জ্ঞান ফেরার পর ববিতাকে জিজ্ঞেস করি, ওপরে গেলে কী করে! ববিতা আমার উত্তর দেয়, আমি নাকি ওকে রাজবাড়ির ভেতর দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।

কথাটা শোনার পরেই অসিত বুঝতে পারে, এ জায়গা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। তাড়াতাড়ি বৃষ্টির মধ্যে দুজনে মোটরবাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে একটা গ্রামের চায়ের দোকানে এসে তাঁরা দাঁড়ায়। স্থানীয়দের সঙ্গে থা বলার পর তারা জানতে পারে ওই রাজবাড়ি চত্বর বহু বছর ধরেই অভিশপ্ত।

– তৃতীয় ঘটনাটিও ছিল বেশ আশ্চর্যের। সদ্য কলেজ পাস করা একদল কিশোরী গিয়েছিল পিকনিক করতে। তাদের মধ্যে একজনের অভজ্ঞতা ছিল একদম আলাদা।

আরও পড়ুন- কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশের দুটি জবরদস্ত প্ল্যান

অনিন্দিতা- আমার নাম অনিন্দিতা। ২০১২ কি ১৩ সাল হবে। দিনটা ছিল ১৫ অগাস্ট। আমাদের গ্র্যাজুয়েশন রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই, পিকনিকের একটা প্ল্যান হয়েছিল। আমরা প্রায় আট জন ছিলাম, বাড়িটার খবর দিয়েছিল কস্তুরি নামে আমাদের এক বান্ধবী। আমরা একটা গাড়ি ভাড়া করে আটজন যাই। বাড়িটাকে দেখে প্রথমে যেমন ভয় লেগেছিল, তেমন বেশ রোমাঞ্চকরও লাগছিল।

অনিন্দিতা ও তার সাত বান্ধবী ছাড়াও গিয়েছিলেন গাড়ির ড্রাইভার ও একজন মহিলা রাঁধুনি। । গাড়ির ড্রাইভার তাদের পিকনিক স্পটে ছেড়ে চলে আসে। কথা ছিল বিকেল পাঁচটার মধ্যে আবার তাদের পিক আপ করা। রাজবাড়ি চত্বরে পৌঁছনোর পরেই, রাঁধুনি নিজের কাজ শুরু করে। অনিন্দিতা ও তার বন্ধুরা, প্রথম কিছুক্ষণ ব্যাডমিন্টন খেলে, তারপর তারা লুকোচুরি খেলার প্ল্যান করে।

অনিন্দিতা-লুকোচুরি খেলার প্ল্যানটা ছিল কস্তুরির। এতো বড় বাড়ি, সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়েছিলাম। পর্ণা চোর হয়েছিল, প্রায় এক ঘণ্টা পর্ণা সারা ঘর খুঁজেও আমাদের খুঁজে পায়নি। আমি একটা ভাঙা আলমারির পিছনে লুকিয়েছিলাম। পর্ণা অনেক্ষণ আমাদের খুঁজেছিল, না পেয়ে স্যারেন্ডার করে। তখন দুপুরের খাবারও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই বেরিয়ে আসি। আমরা সবাই খাওয়া দাওয়া সারলাম, এর পরেই আমাদের একটা বিষয়ে টনক নড়ল।

খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হতেই, রাঁধুনি জিজ্ঞাস করলো, আর একজন কোথায়? এই প্রশ্ন করতেই, অনিন্দিতারা নোটিশ করে, তাদের মধ্যে কস্তুরি নেই। তড়িঘড়ি হাত মুখ ধুয়ে, রাজবাড়ির অন্দরে খোঁজার পর্ব চলে। চারপাশ তন্ন তন্ন করে খোঁজা চলে, কিন্তু কস্তুরির খোঁজ মেলে না। প্রত্যেকের চোখে মুখে, চাপা আতঙ্ক। এর মধ্যে তাদের এক সদস্য বন্যা মোবাইল বের করে, ড্রাইভারকে ফোন করতে যায়।

আরও পড়ুন- ভিডিওগ্রাফি ও এডিটিং শিক্ষে ঘরে বসে লক্ষ টাকা আয় করুন।

অনিন্দিতা-বন্যা ফোন করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু বারবার নট রিচেবল বলতে থাকে। আমরাও মোবাইল বের করে নিজেদের মতো চেষ্টা চালাতে গিয়ে দেখি, কোনও নেটওয়ার্ক নেই। আমরা সবাই, রাজবাড়ির বাইরে, মেন রাস্তার কাছে এসে দাঁড়াই। সাহায্যের জন্য যদি কোনও গাড়ি বা কোনও ব্যক্তিকে দেখতে পাই। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে মানুষ কেন, একটা গরু ছাগলও দেখতে পাওয়া যায়নি।

বিকেল ৫টা নাগাদ গাড়ির ড্রাইভার এলো। তাকে প্রত্যেকে খুলে বললো ঘটনার কথা। সমস্ত ঘটনা শোনার পর ড্রাইভার নির্লিপ্তভাবে যা উত্তর দিল, সেটা শুনে প্রত্যেকের পায়ের তলার মাটি সরে যেতে লাগল।

অনিন্দিতা-ড্রাইভারের কথা শুনে আমরা হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। একবার মনে হল, একি ইয়ার্কি মারছে। ড্রাইভার বললো, রাঁধুনি ছাড়া, তোমরা সাতজনেই এসেছো, আর কেউতো ছিল না। আমরা সবাই বললাম, মানেটা কি! আমাদের সঙ্গে কস্তুরিও এসেছিল। ড্রাইভার মানতে নারাজ। তার দাবি ছিল, রাঁধুনিকে নিয়ে আমরা আটজন এসেছিলাম। তবু আমরা জোর করলাম। আমাদের সঙ্গে ড্রাইভারও কস্তুরিকে গোটা এলাকা খুঁজে দেখতে লাগলো।

আরও পড়ুন- ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ যেটি কিনে খাচ্ছেন, সেটি নিষিদ্ধ কিনা জানেনতো?
দেখুন বাতিল ওষুধের পুরো তালিকা

সন্ধে সাড়ে ছটা পর্যন্ত এই খোঁজার পর্ব চলে। অগত্যা আশাহত হয়ে, অনিন্দিতারা কস্তুরিকে না পেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। তারা পথেই ঠিক করে। প্রথমে কস্তুরির বাড়ি যাবে। তার বাবা মাকে সব কথা খুলে বলবে। তারপর পুলিশের কাছে যাবে।

অনিন্দিতা-গাড়ি যখন কস্তুরির বাড়ির সামনে দাঁড়ালো, ঠিক তার পিছনেই একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো। সেখান থেকে নামল কস্তুরি। পুরো দৃশ্যটা দেখেই আমরা হতবাক। আমরা দৌড়ে যাই, কস্তুরির কাছে। বললাম, কোথায় ছিলি? কস্তুরি আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে উত্তর দেয়, ডাক্তার খানায় গিয়েছিলাম। কেন?

বন্যা জিজ্ঞেস করলো, ডাক্তারখানা মানে?

কস্তুরি উত্তর দিল, আমিতো সকালেই বলে দিয়েছিলাম, আমি যেতে পারবো না। অননিন্দিতাকে মেসেজও পাঠিয়েছিলাম। আমার মা, ভোরে বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছে। প্রথমে এক্সরে, তারপর ডাক্তারখানা, সেখান থেকে মামাবাড়ি দেখা করে এই ফিরছি, ওইতো মা এখনও গাড়িতে।

দেশ বিদেশের রাজবাড়ি, কেল্লা, প্রাসাদের এমন রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনির আপডেট পেতে হলে আমাদের পেজ ফলো করুন
ক্লিক করুন এখানে

এই কথা শোনা আর দেখার পর, আমরা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে পাগল মনে করেছিলাম। সেদিন রাত আড়াইটে পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে ফোন করে, কার্যকারণ খোঁজার চেষ্টা করি। সেই উত্তর আজও পাইনি।

https://www.youtube.com/watch?v=kjKoz5HC2k0
ইউটিউবে আমাদের চ্যানেল Travel Tv Bangla Subscribe করুন।

এমন কোনও কাহিনি আপনার সঙ্গে ঘটেছে? লিখে জানান আমাদের। ইমেল করুন- orbitnewsindia@gmail.com

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

ঠোঙা একটি এলোমেলো সফরের কাহিনি

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- জীবনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে ‌যার ব্যাখ্যা হয়তো বিজ্ঞান বা ‌যুক্তিশাস্ত্রের কাছে থাকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!