Breaking News

‘বিলুপ্ত ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য’ ইরাকে প্রচীন রূপকথার নগরী ব্যাবিলনের ইতিহাসের খোঁজে

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ব্যাবিলোনিয়ার উত্তর অ়ঞ্চলে অবস্থিত ব্যাবিলন ছিল ক্ষুদ্র একটি গ্রাম। এই অপরিচিত গ্রামটির আশ্চর্য শ্রীবৃদ্ধি, অনেকটাই রূপকথার মতো। এই অখ্যাত গ্রামই একসময় হয়ে উঠেছিল, একটি পরাক্রম বিশাল সাম্রাজ্যের রাজধানী। পরে এই বিশাল সাম্রাজ্যের যখন পতন হল তার ইতিহাসও বেশ রোমাঞ্চকর।

ব্যাবিলন নামটির উৎপত্তি সেমেটিক শব্দ ব্যাব-ইল্ থেকে। এই শব্দের অর্থ দেবতাদের নগর। সিরিয়ার মরুপ্রন্তরে ইউফ্রেটিস-টাইগ্রিস উপত্যকার ভূমি। এই নগরের আধিকালের আধিবাসীরা ছিল অন্যান্য সুমেরীয় নগরবাসীদের স্বজাতীয়। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে এই অ়ঞ্চল পশ্চিম থেকে সিরিয়ার মরুবাসীদের অনুপ্রবেশ চলে আসছিল।  পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র যদি ভালো করে দেখা যায়, তাহলে বোঝা যাবে, প্যালেস্তাইন থেকে শুরু করে ব্যাবিলোনিয়ার নীচে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত একটি অর্ধচন্দ্রাকার সামান্য প্রশস্ত উর্বর ভূমিখণ্ড রয়েছে। আরব্য মরুভূমির শিসে এই শ্যমল ভূখণ্ড ইন্দ্রনীল খচিত মুকুটের মতো। সেই কারণে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ব্রেস্টেড এই অর্ধচন্দ্রাকৃতি উর্বর ভূমির নাম দিয়েছেন ফার্টাইল ক্রেসেন্ট।

পশ্চিম এশিয়ায় যতগুলি সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল, প্রাচীনকালে তার প্রায় সবকটির পীঠস্থান ছিল এই অর্ধচন্দ্রাকার ভূমিখণ্ডকে কেন্দ্র করে। মরুপ্রন্তরের যাযাবর জাতিরা স্মরণাতীত কারল থেকে কৃষিপ্রধান উর্বরা ভূমির ওপর হানা দিয়েছে। আরবের সেমেটিক জাতিরা যেমন দক্ষিণ দিক থেকে এসেছে, তেমনই মিটানি জনগোষ্ঠী ও ক্যাসাইট , আর্মানয়েড হিটাইট জনগোষ্ঠীরা এসেছিল অন্যান্য দিক থেকে।

প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠা- সুমু আবুম ও সুমু-লা ইলাম

প্রচীন কিছু লেখনি থেকে জানা যায়, ব্যাবিলনের শাসনকর্তারা নগরদেবতা মারদুকের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। প্রথম রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন সুমু আবুম। সময়টা ২২২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।  এই রাজবংশ ব্যবিলনে তিন শতাব্দ ধরে রাজত্ব করেছিল। সুমু আবুমের রাজত্বকালে আসিরিয়ার একটি প্রচণ্ড আক্রমণ হয় ব্যাবিলনের ওপর এবং ব্যবলিন আক্রান্তাদের পরাজিত করে। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ জনশ্রুতি, কিন্তু এর কোনও রাজকীয় কালপঞ্জীতে উল্লেখ নেই। তবে রাজা সুবু আবুম ব্যাবিলন ও তার আশে পাশে কিছু দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন পাশাপাশি আশেপাশের বেশ কিছু অঞ্চল নিজের অধীনে এনেছিলেন।

পাশেই কিশ নামে একটি নগর ছিল। সেই নগরীর অধিপতি ছিলেন আসদুনি এরিম। তিনি ছিলেন সুমু আবুমের সমসাময়িক। প্রচীন একস শিলালিপি থেকে জানা যায়, পৃথিবীর চর্তুদিকমণ্ডল অর্থাৎ, পৃথিবার চার ভাগের একভাগের সঙ্গে তাঁকে আট বছর ধরে ভীষণ লড়াই চালাতে হয়েছে। যুদ্ধ করতে করতে যখন তাঁর সেনা কমে গিয়ে মাত্র তিনশোতে দাঁড়ায়, নগরের দেবদেবী জামামা ও ইসতার তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এরপরেই তিনি যুদ্দে জয়লাভ করেন ও নগর রক্ষা করতে সামর্থ হন। শত্রুর নামের উল্লেখ সেই শিলালিপিতে না থাকলেও, আন্দার করা যায়, মূলত ব্যবিলনকে উল্লেখ করেই এমন কাহিনী তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন- ট্রয়নগরী কীভাবে ধ্বংস হল

যদিও কিশ নগরী ব্যাবিলনের রাজা সুমু আবুমের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তিনি কিশ অধিকার করেছিলেন এমনকী আর এক নগরী সিপপারও অধিকার করেন সুমু আবুম। যদিও ইতিহাস থেকে জানান যায়, কিশ বা সিপ্পা নিজের রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেননি তিনি। কিশ রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার বজায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু সুমু আবুমের উত্তরাধিকারী সুমু-লা-ইলাম এর রাজত্বকালে কিশ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। সেই বিদ্রোহ দমন করে সুমু-লা-ইলাম কিশকে ব্যাবিলনের অন্তর্ভুক্ত করেন। ইতিহাসবিদদের অনুমান, সুমু-লা-ইলামের রাজত্বকাল শুরু হয়েছিল ২২১১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে। চলবে…

বিশ্বের প্রচীন ইতিহাসের ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলি পড়তে চাইলে, আমাদের হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেল ফলো করুন।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

ভগবান রামের পুত্র লবের তৈরি নগরী কি অধুনা পাকিস্তানের লাহোর?

স্বাতী চ্যাটার্জি– মহাকাব্য, কল্পকাহিনি, গল্পকথা এসবকে ছাপিয়ে বহু গবেষণায় চিহ্নিত হয়েছে, অধুনা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাই ছিল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!