Breaking News

কম খরচে ঘুরে আসুন রাবণের দেশ শ্রীলঙ্কায়, রইল বিস্তারিত সফরসূচি পর্ব ২

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি পথের মাঝে সিগিরিয়ায় হোমস্টেতে ঢোকার আগে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নেওয়া হল। এর পরেই হোমস্টে কিছুটা ফ্রেস হয়ে রওনা দিলাম জঙ্গল সাফারির জন্য মিন্নেরিয়া ন্যাশনাল পার্ক। এখানকার মূল আকর্ষণ হাতি। এছাড়া ময়ুর, কিছু বিরল প্রজাতির পাখি, বুনো মোষ এবং কিছুটা ভিন্নজাতের বাঁদর আর হনুমানের দেখা মেলে। এখানে এই ন্যাশনাল পার্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখি, এটি শ্রীলঙ্কার উত্তর মধ্য প্রদেশের মধ্যে অবস্থিত।

১৯৩৮ সালে এটি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির তকমা পেলেও, ১৯৯৭ সালে অগাস্টে এটি ন্যাশানাল পার্কের তকমা পায়। সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং বিষয়, এই পার্কে একটি বৃহৎ ঝিল রয়েছে, সেটি প্রকৃতিক নয়, বরং তার গুরুত্ব অনেকটাই ঐতিহাসিক। তৃতীয় খ্রিস্টাব্দে লঙ্কার রাজা মহাসেন এই জলাধার তৈরি করান। এই পার্কের এলাকা বিস্তৃত, ৮৮৮৯ হেক্টর জমি জুড়ে।

এই পার্কেই রয়েছে, ২৪টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৬০ প্রজাতির পাখি ২৬ প্রজাতির মাছ এবং ৭৫টি প্রজাতির প্রজাপতি। পর্যটকদের মতে, ১৫০-২০০ হাতির দেখা মেলে এই পার্কে। আবার ওয়াসগামুয়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে মাইগ্রেশনের সময় ৭০০ মতো হাতি আসে এই ন্যাশনাল পার্কে। মাঝে বড় একটি হাতির করিডর রয়েছে। এ ছাড়া, এখানে প্রায়ই দেখা মেলে সল্টওয়াটার ক্রোকোডাইল, ইন্ডিয়ান পাইথন, এশিয়ার ওয়াটার মনিটর এবং বেঙ্গল মনিটর।

চারপাশের পরিবেশ এবং বণ্যপ্রাণীদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর অভিজ্ঞতা মোটেই খারাপ লাগবে না। এদিন এই জঙ্গল সাফারি সেরেই ইতি টানা হল সফরে।

পরের দিন সকালে আমরা সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিলাম ত্রিঙ্কোমালি। এই জায়গার  ঐতিহাসিক, ভৌগলিক এবং পৌরাণিক গুরুত্ব অপরিসীম। তবে ত্রিঙ্কোমালি যাওয়ার আগে দেখে নিলাম, ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি জলাধার, কানতালে জলাধার। এই ড্যামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অপরিসীম বলাই বাহুল্য। আর ইতিহাসটা হচ্ছে, অনুরাধাপুরার রাজা দ্বিতীয় অগ্গবোধি এই জলাধারের নির্মাণ করান, লম্বায় ১৪ হাজার ফুট, গভীরতা ৫০ ফুট। পরে এই ড্যামের সংস্কার করান রাজা পরাক্রমবাহু।

১৯৮৬ সালে ২০ এপ্রিল ভোর তিনটে নাগাদ এই বাঁধ ভেঙে যায়। আশেপাশের গ্রামের ১৬০০ বাড়ি ভেসে যায়, ২ হাজার একর ধান জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রায় ৪ হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে রাতারাতি। মারা যান, প্রায় ১৮০জন। তদন্তে যানা যায়, বাঁধের উপর অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলই এই বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

এবার আসি ত্রিঙ্কোমালির পৌরাণিক গুরুত্বে, স্কন্দপুরাণ মতে, এই জায়গাকেই দক্ষিণের কৈলাস বলা হয়ে থাকে, কারণ, কৈলাস পর্বত আর ত্রিঙ্কোমালি একই দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এ ছাড়া ৫১টি সতী পিঠের অন্যতম এখানে দেবী শঙ্করীমাতার মন্দির রয়েছে।  কিংবদন্তি রয়েছে, এখানে থেকেই রাবণ দেবাদিদেব মহাদেবের উপাসনা করতেন। ভৌগলিক গুরুত্ব কারণ, এই হচ্ছে পৃথিবীর সেই শেষ প্রান্ত, যার পরেই, গভীর জলরাশির সীমা, এটি ম্যাপ অনুসারে উত্তর পূর্ব কোনে অবস্থিত হলেও, মূলত পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।

আর ঐতিহাসিক গুরুত্ব হল, এই অঞ্চলটি মূলত তামিল অধ্যুষিত, ফলে এক সময় জাফনার মতো এটি এল টি টি ই দের মুক্তাঞ্চল ছিল। ত্রিঙ্কোমালির মন্দির থেকে বেরিয়ে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, কান্নিয়া হট স্প্রিং বা উষ্ণ প্রস্রবণ।  এখানে সাতটি কুণ্ড রয়েছে, প্রত্যেকটির জলই বেশ গরম। এখানে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের প্রাচীন উপাসনা স্থল রয়েছে, যার অধিকাংশ গৃহযুদ্ধের সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

উষ্ণপ্রস্রবন দেখে ফেরার পথে একটি বালাজি মন্দিরও দেখা হল। সেখান থেকে বেরিয়ে দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে হোমস্টেতে। আগের দিন, ত্রিঙ্কোমালির সতী পিঠ, উষ্ণপ্রস্রবণ, বালাজি মন্দির, ত্রিঙ্কোমালি ন্যাচারাল পোর্ট এবং নীলাভেলি বিচ দেখা হয়ে গিয়েছে। বিচের কিছু ছবি এই পর্বে সংযুক্ত করলাম।

আরও পড়ুন- কম খরচে ঘুরে আসুন রাবণের দেশ শ্রীলঙ্কায়, রইল বিস্তারিত সফরসূচি পর্ব ৩

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

‘বিলুপ্ত ব্যাবিলনের সাম্রাজ্য’ ইরাকে প্রচীন রূপকথার নগরী ব্যাবিলনের ইতিহাসের খোঁজে

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ব্যাবিলোনিয়ার উত্তর অ়ঞ্চলে অবস্থিত ব্যাবিলন ছিল ক্ষুদ্র একটি গ্রাম। এই অপরিচিত গ্রামটির আশ্চর্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!