ঘাসের উপর জমে আছে হিম। ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। শনশন বাতাসের পার্শ্বসঙ্গীতে অদ্ভুত রোমান্টিকতার মাদকতা। এখানেই হয়তো মন বলে ওঠে একটু উষ্ণতার জন্য। বাংলার বিখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর প্রিয় জায়গা ম্যাকলাক্সিগঞ্জ। তাঁর একটি বাড়িও ছিল। অবসরে তিনি যেতেন এখানে। আর এখানকার রূপ, রস গন্ধকে নিয়েই লিখেছেন একাধিক উপন্যাস। তার মধ্যে অন্যতম একটু উষ্ণতার জন্য।
শিশির ঝরানো ঘাসে ভেজা পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে অনেক শঙ্খিনী নদী পেরিয়ে সোনা-গলানো পোশাক পরে সকাল আসে এখানে।” সেই আবেশকে মাথায় রেখেই, আমরাও ঠিক এই জায়গাটার খোঁজ দিচ্ছি আপনাদের। অনেকের কাছে অজানা, আবার কারও পছন্দের উইকএন্ড ডেস্টিনেশন। একসময় মিনি স্কটল্যান্ড হিসেবে পরিচিতি ছাল এই জায়গাটার। বিশ শকতের গোড়ার দিকে, এখানে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য স্থাপিত হয়েছিল কলোনাইজেশন সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া। এরপর ১৯৩৩ সালে ১ হাজার একর জমিতে তৈরি হয় ব্রিটিশ-ভারতের প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কলোনি। কোঙ্কা, ল্যাপরা, হেসালং, মাহুলিয়া, ডুলি ও রামদাগা—এই ছয় গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠে কলোনি। তখন ৩০০ পরিবারের বাস ছিল এখানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে-ধীরে কমতে থাকে জনসংখ্যা। বহু অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান এলাকা ছাড়েন ভয়ে, কিছুজন থেকে যান, মাতৃভূমির টানে।
বুদ্ধদেব গুহর অনেক গল্প উপন্যাসে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের বর্ণনা পাওয়া যায়। একসময় বাঙালিরা হাওয়া-বদলের জন্য আসতেন এই এখানেই। আর এখানকার আবহাওয়াও মনোরম। ঢেউ খেলানো প্রান্তর, পাহাড়ি নদী, জঙ্গল, ঝর্না নিয়ে গড়ে উঠেছে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। সাহেবদের পরিত্যক্ত বাংলোর পাশ দিয়ে, ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ঘুরতে পারেন এই পাহাড়ি জনপদ।
বেশ কিছু অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ানদের বাংলোর মাঝে ঘুরে নিতে পারেন ম্যাকলাস্কি সাহেবের স্মৃতিতে গড়া স্মৃতি সৌধ। ই এল ম্যাকলাস্কি সাহেবের উদ্যোগেই ঝাড়খণ্ড নাগপুর মালভূমিতে গড়ে উঠেছিল এই কলোনি, যা আজকের ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। এছাড়াও এখানে রয়েছে রোমান ক্যাথলিক চ্যাপেল অফ দ্য সেক্রেড হার্ট, জাগৃতি বিহার। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের প্রান্ত দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর ও চট্টি নদী। হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন এই জায়গাগুলি। ম্যাকলাস্কিগঞ্জকে পাখির চোখ দিয়ে দেখার জন্য যেতে পারেন হেসালাং ওয়াচ টাওয়ারে। এছাড়া যেতে পারেন ডেগাডেগি নদী ও কুমারপাত্রা নদী। নদীর তীরগুলো যেন এক-একটা পিকনিক স্পট। মায়াপুর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যদি নাট্টা পাহাড়ের দিকে যান, তাহলে মন ভরে যাবে। এখান থেকে উপভোগ করতে পারেন সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য।
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এখনও দুটো মাস রয়েছে। উইকেন্ডে অনায়াসে কাটিয়ে আসতে পারেন তিনটে দিন।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে একমাত্র শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস সোজা যায় ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। কিন্তু সেটা নামায় মাঝরাতে। তাই রাতের ঝক্কি এড়াতে আপনি রাঁচিগামী ট্রেন ধরতে পারেন। রাঁচি থেকে ম্যাকলাস্কিগঞ্জ ৫৬ কিলোমিটার। রাঁচি থেকে গাড়ি পেয়ে যাবেন ম্যাকলাস্কিগঞ্জ যাওয়ার। ম্যাকলাস্কিগঞ্জে থাকার জায়গা খুব কম। তাই আগে থেকে সেই হাতে গোনা হোটেল, কটেজগুলো বুক করে রাখাই ভাল।