Breaking News

হাওড়ার শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, এক স্বর্ণময় অধ্যায়, বর্তমানে স্বপ্নের অতীত

অর্বিট ডেস্ক– হাওড়া শহরে একটা সময়ে দুরন্ত বেগে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার পর নানা অঞ্চল থেকে বহু শ্রমিক রেলকর্মী হিসেবে হাওড়ায় বাস করত। তাদের প্রথম ধর্মঘট শুরু হয় ১৯০৬ সালে। সেই সময় হাওড়া স্টেশন থেকে আসানসোল পর্যন্ত রেল পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ধর্মঘটের জেরে। টানা প্রায় দুমাস ধরে চলেছিল ধর্মঘট। যদিও পুলিশের অত্যাচারে সেই ধর্মঘট শেষ হয়।

ধর্মঘটে যুক্ত থাকার অভিযোগে বহু অফিসার কর্মীর চাকরি যায়, অনেককে উঁচু পদ থেকে সরিয়ে নীচুতে নামানো হয়। এই রেল ধর্মঘটের সমর্থন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপিনচন্দ্র পাল। পরে আরও দফায় দফায় ধর্মঘট হয়, প্রতিবারই, ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের সদর দফতর কলকাতা ও হাওড়ায় ধর্মঘট চালু হওয়ায় ভারতের সঙ্গে এই দুই শহরের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

ইতিহাসের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯২০ সালেই ১১০টি চটকল ধর্মঘট হয়েছিল। সেই সময় বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় তিনি ছিলেন অধ্যাপক, ভারতের বাইরেও তিনি অধ্যাপনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রতি। ১৯২৩ সালে তিনি মস্কো যান, মার্কসবাদ নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য। লেনিনের প্রত্যক্ষ ভাষণ শুনে অনুপ্রণিত হয়েছিলেন।

১৯২৫ সালে হাওড়ায় ফিরে তিনি শ্রমিক আন্দলনে যোগ দেন ও সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন । একবার কমিউন্স্টদের নেতৃত্বে চটকল শ্রমিক ও কৃষকদের সম্মেলন ডাকা হয়, সেই সম্মেলনে অবশ্য আসেননি শিবনাথ। কারণ, বেশ কিছু মতাদর্শে অমিল ছিল।

একবার বামনগাছি ব্রিজের উপর জমায়েত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালায়, এরপর পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। সেই জমায়েতের নেতৃত্বে ছিলেন শিবনাথ। শ্রমিক আন্দোলনের কথা এলে হাওড়াতে মেথর আন্দোলনের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। সেই সূত্রে আর এক নেতা অতুল রায়ের নামেও বেশ উল্লেখযোগ্য। তিনি এতোটাই একনিষ্ঠ নেতা ছিলেন, হরিজন আন্দোলন ও সেবার জন্য তাদের এলাকাতেই সারা জীবনের জন্য থেকে যান। এমনকী এক হরিজন মহিলাকে তিনি বিয়েও করেছিলেন।

পরবর্তী সময়ে হাওড়ায় কমিউনিস্ট পার্টির একাংশের হাত ধরে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়। শালিখার ব্রিটানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার নেতৃত্বে ছিলেন ধরমবীর নামে এক অবাঙালি শ্রমিক নেতা। যিনি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত থেকেও পার্টি বিরোধী জঙ্গি কার্যকলাপে বিশেষ ভাবে যুক্ত ছিলেন। ফলে দল থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।

হাওড়ার ঘুসুড়িতে তৈরি হয় বেঙ্গল লেবার পার্টি অফিস। এটি প্রতিষ্ঠা করেন ব্যারিস্টার নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার। এই প্রতিষ্ঠান শ্রমিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই দলে ছিলেন বিখ্যাত শ্রমিক নেতারা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালী মুখোপাধ্যায়, বলাইচাঁদ সিংহ, বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়, ডাঃ রণেন সেন, আব্দুল মোমিন, বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির গঙ্গোপাধ্যায়, পতিতপাবন পাঠক ও আরও অনেকে।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

এই বাড়িতে রাখা আছে, কালো অধ্যায়ের স্মৃতি ‘দাহ হওয়া সতীর সিঁদুর’ কিন্তু কেন?

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ঘাটের কাছে মাঝিদের নৌকা ভেড়ানো বারণ হয়ে গিয়েছে। মণ্ডলবাড়ির এক কর্তা মারা গিয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!