অর্বিট ডেস্ক- শীতের আমেজ পড়ে গিয়েছে, অনায়াসে উইকেন্ডে একটা দুর্দান্ত ডে ট্রিপ সারতে পারেন বিখ্যাত পরিযায়ী পাখিদের আড্ডাখানায়। হ্যাঁ কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে সাঁতরাগাছির ঝিল। বহু বছর ধরে সেখানে শীতের সময় হাজির হয়, নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।
কয়েক বছর আগেই, সাঁতরাগাছি পরিযায়ী পাখিদের কাছে কতটা পছন্দের তা বুঝতে একবার সুমারি বা সমীক্ষা করা হয়। সেই সময় আয়োজন করা হয়েছিল পাখি নিয়ে দু’দিনের সচেতনতা শিবিরেরও। বন দফতরের দাবি ছিল, আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেলেও সাঁতরাগাছির এই ছবি এখনও আশাপ্রদ। পরিস্থিতি দেখতে ওই দফতরের একদল পদস্থ অফিসারও সাঁতরাগাছি গিয়েছিলেন। আসলে গত কয়েক বছর ধরেই পরিবেশ দূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে চাপান উতোর চলছে, পশ্চিমবঙ্গের বহু জলা জমি থেকে পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু সাঁতরাগাছি ঝিলের জনপ্রিয়তা এখনও রয়েছে।
প্রতি বছর শীতে ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল এমনকী রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পাখি চলে আসে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ নানা অঞ্চলে। সেক্ষেত্রে পাখিদের পছন্দের একটি জায়গা সাঁতরাগাছি। পক্ষীবিশারদদের মতে, এই সব পরিযায়ী পাখিরা ৯০ শতাংশই বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস। ‘প্রকৃতি সংসদ’-এর সহ-সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, পাখি-সুমারি চালিয়ে দেখা গেছে কলকাতায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমলেও সাঁতরাগাছিতে তা কমবেশি একই আছে।
গত কয়েক বছরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাঁতরাগাছিতে যথাক্রমে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার জলার পাখির সন্ধান মিলেছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় ২১ প্রজাতির ৭৩০০ পাখি রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে লেসার হুইসলিং ডাক, যা পরিচিত ছোট সরাল নামে।
এ ছাড়াও বিপুল পরিমাণে ‘নর্দান পিনটেল’ বা দিকহাঁস, ‘শোভেলার্স’ বা খুন্তিহাঁস, ‘টাফটেড ডাক’ বা বামুনিয়া হাঁস শীতের সময় আসে সাঁতরাগাছিতে। আর সবচেয়ে কম গারগেনি বা গিরিয়া হাঁস, হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার, হোয়াইট ব্রেস্টেড ওয়াটার হেন ও সিট্রিন ওয়াগটেলও দেখতে পাওয়া যায়। কেবল উত্তরের প্রতিবেশি দেশগুলি থেকেই নয়, পরিযায়ী পাখিও আসে রাশিয়ার লেক বৈকাল ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকেও।
কুশলবাবুর মত, পূর্ব কলকাতার জলাভূমির ‘ক্যাপ্টেন ভেড়ি’-তেও তাঁরা পরিযায়ী পাখির সমীক্ষা করতেন। কিন্তু সেখানে সংখ্যাটা কমে প্রায় ২০০তে নেমেছে। ওখানে প্রতি বছর সমীক্ষা হয় না। পাখি-বিশারদদের মত, বহু জায়গায় নগরায়নের ফলে আদর্শ পরিবেশ হারাচ্ছে, ফলে পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফেরাচ্ছে।
কীভাবে যাবেন- হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণপূর্ব রেলের যে কোনও লোকাল ট্রেনে চেপে সাঁতরাগাছি স্টেশন। এক নম্বর প্লাটফর্ম দিয়ে টিকিট কাউন্টারের পাশ দিয়ে তিন মিনিটের হাঁটাপথ। গাড়িতে এলে, সাঁতরাগাছি হয়ে ঝিলপাড়।