Breaking News

টাওয়ার অফ সাইলেন্স, পারসিদের অন্ত্যেষ্টি যে ভাবে হয়ে থাকে, ‘মৃত্যুর মৌন শিখর’

স্বাতী চ্যাটার্জি– টাওয়ার অফ সাইলেন্স-অন্তর্জলি যাত্রায় নিস্তব্ধতার অন্তিম চুম্বন।একটি চক্রাকার কূপ। পাশে প্রায় আট ফুটের বাঁধানো গোল দাওয়া। তারই গা জুড়ে লম্বা ঘেরা প্রচীর। কী আছে ওখানে ? ওখানেই নিস্তবদ্ধতার বাস। ওখানে শবদেহ ভোজন পর্ব চলে। হ্যাঁ, মানুষের মৃতদেহ ভোজন।

আজব শহর কলকাতা। বহু ভাষাভাষির মানুষ, নানা ধর্মালম্বীদের আবাসস্থল। সেই কবে থেকে বাসা জমিয়েছে এখানে তাঁরা।

কলকাতার আনাচে কানাচে

শিয়ালদহ থেকে বেলেঘাটা মেন রোড ধরে যেতেই চোখে পড়ে এমন এক জায়গা, যা একদম নিস্তব্ধ। শহুরে ব্যস্ততার জেরে হয়তো এখন অনেকটাই এই স্থান আবডালে চলে গিয়েছে। তবু রয়েছে স্মৃতি হয়ে।

প্রাচীন কাল থেকে ভারতের সঙ্গে পারসিদের একটা সুসম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে ধরে ভারতে বহু আগে থেকেই পাকাপাকি বাস শুরু করেন পারসিরা। মুম্বই, গুজরাটসহ, কলকাতাতেও একটা অংশ চলে আসেন তাঁরা।

কলকাতার বুকে যে কটি ভিন্ন ধর্মালম্বীদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জায়গা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম পারসিদের দাখমা, বা টাওয়ার অফ সাইলেন্স, বলা বাহুল্য ইংরাজি শব্দটি দেওয়া ব্রিটিশদের।

প্রচীন জরাথ্রুস্ট্রিয়ান রীতি অনুসারে, ধর্মালম্বীদের মৃতদেহ আগুনে পোড়ানো হয় না বা মাটির নীচে কবরও দেওয়া হয় না। বরং উঁচু কোনও জায়গায় এমনই এক প্রাচীর ঘেরা কূপের মধ্যে মৃতদেহ বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। আর তা ছিন্নভিন্ন করে খেতে শুরু করে চিল, শকুনের দল। অবশেষ পড়ে থাকে শুধু কঙ্কাল। এটাই পারসিদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে অন্তর্জলি যাত্রা।

এই প্রথার অন্যতম কারণ

এই রীতির পিছনে দর্শন হল, পারসিদের জরাথ্রুস্ট্রিয় ধর্মমতে অগ্নি বা সূর্য প্রধান দেবতা। তাঁরই শক্তিতে প্রকৃতির সমস্ত জীবই শক্তিধারণ করে। একমাত্র পৃথিবীর জীব জগতে আত্মাই পবিত্র আর বাকি সবই অপবিত্র। তাই আত্মা দেহত্যাগ করলে তা অপবিত্র হয়ে ওঠে। ফলে তা আগুনকে আহুতি দেওয়া অধর্মের কাজ বা জলে ভাসিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। বরং মৃত্যুর পরেও তাঁর দেহ যাতে সমাজের অন্য প্রাণী জগতের কাজে আসে, সেটাই তুলে ধরা।

ইতিহাসের সূত্র অনুসারে ৪৫৮ খ্রিঃ পূর্বাব্দে জরাথ্রুস্ট ধর্মের প্রবর্তন হয়। এটি প্রাচীন ইরানের একামেনিড, পার্থিয়ান, সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্ম ছিল। অগ্নি (আতার, আযার) এর পাশাপাশি জলকেও (আপো, আবান) দেবতারূপে বিচার করা হয়।
পারসিদের ধর্মগ্রন্থ আবেস্তা বা জেন্দাবেস্তার সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং পয়েন্ট হল, এর অক্ষর পারসি হলেও, বহু শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ সংস্কৃতের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে।

হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস

কলকাতায় সভ্যতা বাড়ছে, নগরায়ণের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রচীন সংস্কৃতির আবেশ। এখন আর টাওয়ার অফ সাইলেন্সে ভিড় জমায় না চিল, শকুনের দল। নামে সাইলেন্স থাকলেও, নিস্তবদ্ধতা এখন আর ঘর করে না ওখানে, অবিরাম কোলাহল, যানবাহনের হর্নের আওয়াজ জায়গা দখল করেছে যে!! তবু এখনো মৃত্যুর নিস্তব্ধতা ধরে রেখেছে টাওয়ার ওফ সাইলেন্স।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

এই বাড়িতে রাখা আছে, কালো অধ্যায়ের স্মৃতি ‘দাহ হওয়া সতীর সিঁদুর’ কিন্তু কেন?

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- ঘাটের কাছে মাঝিদের নৌকা ভেড়ানো বারণ হয়ে গিয়েছে। মণ্ডলবাড়ির এক কর্তা মারা গিয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!